ভোটমুখী বিহারে রাহুল গান্ধীর ভোটার অধিকার যাত্রায় প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মাকে অপমানের অভিযোগে বিতর্কে জড়াল কংগ্রেস-সহ ইন্ডিয়া জোট। সম্প্রতি দ্বারভাঙ্গা জেলার ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরেই বিজেপির তোপের মুখে পড়েছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। কংগ্রেসকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবিও জানিয়েছে গেরুয়া শিবির।
বৃহস্পতিবার বিজেপি জানিয়েছে, ভোটার অধিকার যাত্রার মঞ্চে যে ভাষায় প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করা হয়েছে সেটা ইতিহাসে কোনওদিন হয়নি। এক্স বার্তায় বিজেপি বলেছে, 'তেজস্বী যাদব এবং রাহুল গান্ধীর মঞ্চ থেকে এত কুরুচিকর ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে... কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করাও সম্ভব নয়। এটি এমন একটি ভুল যে রাহুল গান্ধী যদি হাজার বার কান ধরে উঠবোস ক্ষমা চান... এমনকী বিহারের মানুষও ক্ষমা করবে না। অত্যন্ত লজ্জাজনক।' বিজেপি আরও অভিযোগ করেছে যে বিহার নির্বাচনের আগে ইন্ডিয়া জোট প্রচারের জন্য দক্ষিণের রাজ্যগুলি থেকে নেতাদের-তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন এবং তেলাঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডিকে, আমন্ত্রণ জানিয়ে বিহারীদের অসম্মান করেছে। অন্যদিকে বিজেপির মুখপাত্র নীরজ কুমারের দাবি, 'প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে অশালীন মন্তব্য করেছেন এবং দলের কর্মীদের করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন তাঁর জন্য রাহুল গান্ধী সমগ্র দেশের কাছে ক্ষমা চান। বিহারের মানুষ আপনাকে কোনদিন ক্ষমা করবেন না।' তিনি আরও বলেন, 'একজন দরিদ্র ওবিসি পরিবারের সন্তান প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, আপনার সেটা সহ্য হচ্ছে না। এই পরশ্রীকাতরতাই একদিন আপনাকে শেষ করবে।'
বিজেপির সিনিয়র নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ আবার রাহুলের পাশাপাশি তেজস্বীকেও একই বন্ধনীতে রেখে আক্রমণ শানিয়েছেন।কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের উচ্চারিত মন্তব্য কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রী নয়, সমগ্র দেশের কাছে 'অপমান' এবং 'লজ্জার' বলে তোপ দেগেছেন তিনি। তাঁর কথায়, 'মঞ্চ থেকে রাহুল ও তেজস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মায়ের বিরুদ্ধে যে সব অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা নিন্দনীয়। এটা কেবল প্রধানমন্ত্রীর অপমান নয়, দেশের জন্যও লজ্জার ব্যাপার। এর ফলাফল পাবে কংগ্রেস এবং আরজেডি।'আরেক বিজেপি নেতা শাহনওয়াজ হুসেন বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে ধরণের ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে... যে ধরণের কুরুচিকর মন্তব্য করা হয়েছে, তাতে রাহুল গান্ধীর ক্ষমা চাওয়া উচিত। বিহারের মানুষ প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ভালোবাসে এবং তারা এটা মেনে নেবে না।'
ঘটনার সূত্রপাত
সম্প্রতি দ্বারভাঙ্গা জেলার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।‘ভোটচুরি’র অভিযোগে বিহারে দীর্ঘ ১৩০০ কিলোমিটার ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ শুরু করেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। বুধবার রাহুলের যাত্রাপথেরই এক সভামঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর মা কে জড়িয়ে অশ্রাব্য মন্তব্য কংগ্রেস কর্মীরা। যদিও সেই সময় মঞ্চে নেতৃত্বস্থানীয় কেউ উপস্থিত ছিলেন না। কার্যত ফাঁকা মঞ্চের দখল চলে গিয়েছিল সাধারণ কর্মীদের হাতে। কর্মীরাই মঞ্চে উঠে ওই কাণ্ড ঘটান।পাশাপাশি মাইকে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা নউশাদের নামে জয়ধ্বনি দিতে শোনা যায় স্থানীয় কর্মীদের। ওই ব্যক্তি বিহারের আগামী নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়াতে পারেন বলে এলাকাবাসীর দাবি।সেই অনুষ্ঠানে পোস্টারে দেখা গেছে রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ও তেজস্বী যাদবের মতো নেতাদের ছবি। যদিও ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা।
এদিকে, বিতর্ক শুরু হতেই ঘটনার দায়ভার এড়িয়ে চলছে কংগ্রেস। তবে এই খবর চাউর হতেই সংবাদমাধ্যমকে টেলিফোনে নওশাদ জানিয়েছেন, মুজফফরপুরের একটি র্যালিতে যোগ দেওয়ার জন্য ঘটনার প্রায় ১৫-২০ মিনিট আগেই রাহুল গান্ধীর সঙ্গে মঞ্চ ছেড়েছিলেন তিনি। স্থানীয় কংগ্রেস নেতা বলেন, 'আমি দিল্লি থেকে দু-বার ভোটে দাঁড়িয়েছি। প্রায় ২০ বছর ধরে দলের সঙ্গে যুক্ত। এমন কোনও কাজ আমি করবোই না। তবুও, যেহেতু অনুষ্ঠানটি আমরাই করেছিলাম তাই আমি ক্ষমা চাইছি।'