রাশিয়ার থেকে তেল কেনার জন্য ‘শুল্ক শাস্তি’ চাপিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ হারে শুল্ক আদায় করছে মার্কিন সরকার। সেই নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে চাঁচাছোলা ভাষায় ফের ভারতকে নিশানা করলেন হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নেভারো। নয়া দিল্লিকে তাঁর পরামর্শ, 'কৌশলগত অংশীদারের মতো আচরণ করুন।'
শুক্রবার এক্স হ্যান্ডেলে হোয়াইট হাউজের বাণিজ্য উপদেষ্টা লিখেছেন, 'ভারতীয় পণ্যের উপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। এটি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের যুদ্ধযন্ত্রের জীবনরেখা কেটে ফেলার মতো। উচ্চ শুল্ক হার সত্ত্বেও মার্কিন গ্রাহকরা ভারতীয় পণ্য কেনেন। কিন্তু ভারত, উচ্চ শুল্কর জন্য ভারতীয় পণ্য রপ্তানির অনুমতি দিচ্ছে না। ভারতীয় তেল শোধনাগারগুলি তাদের রাশিয়ান অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতায় অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করছে এবং তারপর কালোবাজারে বিক্রি করছে এবং বিপুল মুনাফা করছে। এর ফলে রাশিয়ার পকেটে নগদ অর্থ আসছে, যা ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে অর্থায়ন করছে।' তিনি আরও বলেন, 'ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ভারত রাশিয়া থেকে এক শতাংশেরও কম অপরিশোধিত তেল আমদানি করত, আজ সেই আমদানি ৩০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে, যা প্রতিদিন প্রায় ১৫ লক্ষ ব্যারেল। এই বৃদ্ধি দেশীয় চাহিদার কারণে হয়নি, বরং ভারতীয় তেল কোম্পানিগুলি এর থেকে লাভ করছে, যার মূল্য ইউক্রেনের জনগণ দিচ্ছে।'
পিটার অভিযোগ করেছেন যে 'ভারতের বৃহৎ তেল কোম্পানিগুলি বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রকে একটি পরিশোধন কেন্দ্রে পরিণত করেছে, যা রাশিয়ার তেল থেকে অর্থ উপার্জনের একটি উপায় হয়ে উঠেছে। ভারতীয় শোধনাগারগুলি রাশিয়া থেকে সস্তা তেল কিনে ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এশিয়ান দেশগুলিতে রপ্তানি করছে এবং ন্যায্যতার নামে নিষেধাজ্ঞাগুলিও এড়াচ্ছে।' নাভারো আরও দাবি করেছেন, ভারত রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করে এবং প্রতিদিন এক মিলিয়ন ব্যারেল পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্য রপ্তানি করে।
এর আগে ব্লুমবার্গকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারতকে নিশানা করেন পিটার। তিনি জানান, রাশিয়ার থেকে তেল কেনা এই মুহূর্তে বন্ধ করলে, ভারতের ঘাড় থেকে ২৫ শতাংশ শুল্কের বোঝা নেমে যাবে। তাঁর দাবি, ইউক্রেনে শান্তি ফেরানোর রাস্তা কিছুটা হলেও দিল্লির উপর দিয়ে যায়। তাঁর বক্তব্য, 'এটা আসল অর্থে মোদির যুদ্ধ। কারণ শান্তির রাস্তা আংশিক ভাবে হলেও দিল্লির উপর দিয়ে যায়।' শুল্ক নিয়ে বোঝাপড়ার কোনও অবকাশ রয়েছে কি না জানতে চাওয়া হলে, উল্টে ভারতকেই দোষারোপ করেন পিটার। তাঁর বক্তব্য, 'আমি সত্যিই বিভ্রান্ত। মোদী ভাল নেতা। ওঁদের গণতন্ত্র যথেষ্ট পরিণত। পরিণত লোকজনের হাতে সরকার। আমায় যেটা ভাবাচ্ছে তা হল, ভারতীয়দের ঔদ্ধত্য। বলছেন, ‘আমরা চড়া শুল্ক নিই না তো! আমাদের সার্বভৌমত্ব রয়েছে। যার থেকে ইচ্ছে তেল কিনতে পারি।' রাশিয়ার থেকে সস্তায় তেল কিনে ভারত যুদ্ধে মদত জোগাচ্ছে, যাতে প্রাণ যাচ্ছে ইউক্রেনীয়দের।