ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এশিয়া কাপের গ্রুপ 'এ'-র ম্যাচের আগে ক্রমেই বাড়ছে বয়কটের ডাক। এরই মাঝে মুখ খুললেন ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া। এই খেলা থেকে নাম প্রত্যাহার না করার বিষয়ে তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন যে কেন্দ্রীয় সরকারের জারি করা নীতিমালার কথা মাথায় রেখেই ভারত এই ম্যাচটি খেলবে। তিনি বলেন, 'একটি বহুপাক্ষিক ইভেন্ট বিবেচনা করে ভারতকে এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে হবে। ভারত যদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ বয়কট করত, তাহলে ভবিষ্যতে অলিম্পিক ও কমনওয়েলথ গেমস আয়োজনের স্বপ্ন ধাক্কা খেত।'
অবশ্য দেবজিৎ এই যুক্তি দিলেও এর আগে ক্রীড়া জগতে এমন বহু উদাহরণ আছে, যেখানে কোনও একটি দেশকে বয়কট করা হয়েছে খেলার প্রাঙ্গন থেকে, তবে তার প্রভাব বয়কটকারী দেশের ওপর পড়েনি। এর আগে মস্কোতে ১৯৮০ সালের অলিম্পিক বয়কট করেছিল আমেরিকা সহ ৬৬টি দেশ। পরের অলিম্পিকই আমেরিকায় হয়েছিল, তাতে যায়নি রাশিয়া। এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে রাশিয়া আবার সব খেলার থেকেই নিষিদ্ধ। টেনিসের মতো ব্যক্তিগত খেলায় রুশ প্রতিযোগীরা অংশ নিতে পারছেন, তবে তাঁরা দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারছেন না। এদিকে এর আগে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভারতের রাজনৈতিক শীতলতা চলাকালীন এশিয়া কাপের দ্বিতীয় সংস্করণ খেলতে শ্রীলঙ্কায় যায়নি ভারত।
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল, পাকিস্তানি সন্ত্রাসীরা দক্ষিণ কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বাইসারান তৃণভূমিতে হামলা চালিয়ে ২৬ জন সাধারণ মানুষকে খুন করেছিল। মৃতদের মধ্যে ২৫ জনই পর্যটক ছিলেন। তাদের ধর্ম জিজ্ঞেস করে খুন করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। সেই ঘটনার কয়েক মাস যেতে না যেতেই ভারত এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলায় গর্জে উঠেছে বিরোধীদলগুলি। শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা আদিত্য ঠাকরে বলেছেন, 'রক্তপাত এবং ক্রিকেট একসাথে চলতে পারে না।' অন্যদিকে মহারাষ্ট্র কংগ্রেস এটিকে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত সাধারণ মানুষ এবং জওয়ানদের প্রতি 'অপমান' বলে অভিহিত করেছে।
এদিকে শিবসেনা (ইউবিটি) প্রধান উদ্ধব ঠাকরে মহারাষ্ট্র জুড়ে 'সিঁদুর' বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই ম্যাচ বয়কট করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান গোটা বিশ্বকে জানানোর একটি সুযোগ ছিল ভারতের কাছে। শনিবার মুম্বইয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'যতক্ষণ পর্যন্ত সন্ত্রাস বন্ধ না হয়, ততক্ষণ আমাদের পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত নয়।' বিজেপিকে নিশানা করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, সরকার কি ঘোষণা করতে যাচ্ছে যে অপারেশন সিঁদুর বন্ধ হয়ে গেছে এবং দেশপ্রেমিকদের? এরই সঙ্গে আজকের ভারত-পাক ম্যচটি না দেখার জন্য সকলকে আহ্বান জানান উদ্ধব। তাঁর কথায়, পহেলগাঁও হামলার ক্ষত এখনও তাজা রয়েছে। উদ্ধব বলেন, 'এই ক্রিকেট ম্যাচ জাতীয় অনুভূতির অপমান। আমাদের কি পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা উচিত? যখন আমাদের সেনারা সীমান্তে তাদের জীবন উৎসর্গ করছে, তখন এই ম্যাচ হওয়া উচিত?' দিল্লির প্রাক্তন মন্ত্রী ও আপ নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ দলীয় কর্মীদের সঙ্গে জাতীয় রাজধানীতে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের প্রতীকী পুশপুত্তলিকাও দাহ করেন। সৌরভ ভরদ্বাজ সাংবাদিকদের বলেন, 'পহেলগাঁও হামলায় স্বামীকে হারানো আমাদের মহিলাদের জন্য এই ম্যাচটি চরম অপমানজনক। কিন্তু এখনও আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।'
এদিকে ওয়াইসি বলেন, '২৬ জন সাধারণ নাগরিককে ধর্ম জিজ্ঞাসা করে গুলি করা হয়েছিল। যদি আপনার পরিবারের কারুর মৃত্যু হত তাহলে কি আপনি পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচকে সমর্থন করতে পারতেন? আমরা গতকালও নিহতদের পরিবারের পাশে ছিলাম, আজও আছি এবং আগামীকালও থাকব। পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলার সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক সেই প্রশ্ন তুলে তিনি সরকারের কাছে স্পষ্ট জানতে চান, কয়েক হাজার কোটি টাকার আর্থিক লাভ কি মানুষের প্রাণের চেয়েও বেশি মূল্যবান?'