উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি জনজীবনকে কার্যত বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বিশেষত পাহাড়ি অঞ্চল ও ডুয়ার্সে অতিবৃষ্টির প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। তিস্তা, কালানদি, পানা, বাসরা, কালিঝোরা-সহ একাধিক পাহাড়ি নদী ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। ভুটান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি স্রোতের তোড়ে জলের স্তর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি ব্লকের সেন্ট্রাল ডুয়ার্স চা-বাগান ও আশেপাশের বসতিপাড়া জেলা সদরসহ আশেপাশের এলাকা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: ফুসফুসে কাদা, গলায় আটকে পাথর! উত্তরকাশীর বিপর্যয়ে মানসিক লড়াই বিধ্বস্তদের
সেন্ট্রাল ডুয়ার্স মূলত একটি চা-বাগান কেন্দ্রিক এলাকা। পানা, বাসরা ও কালিঝোরা নদী দ্বারা চারদিক থেকে ঘেরা। বছরভর এই নদীগুলি সাধারণত শুষ্ক বা অল্প জল থাকে। ফলে হাঁটাপথেই পারাপার চলে স্থানীয়দের। বর্ষাকালে জল বাড়লেও ঘুরপথে চলাচল সম্ভব হয়। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। ভুটান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে আসায় তিনটি নদীর জলস্তরই ভয়াবহভাবে বেড়ে গিয়েছে। পানা নদীতে সেতু না থাকায় পারাপার একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বাসরা ও কালিঝোরা নদীর উপচে পড়া জলও রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। যারফলে বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এমন জলাবদ্ধ অবস্থা বহু বছর পর দেখা গেল। স্কুল, বাজার, হাসপাতাল সব কিছুতেই যাতায়াত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রোগী পরিবহন থেকে শুরু করে জরুরি সরবরাহ সবকিছুই ব্যাহত। বহু গ্রামে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছানোও সম্ভব হচ্ছে না। পানা নদীতে স্থায়ী সেতু নির্মাণের দাবিতে আবারও সরব হয়েছেন গ্রামবাসীরা। কারণ তাঁদের মতে, এই সমস্যা প্রতিবছর বর্ষায় দেখা দেয়, কিন্তু এবার মাত্রা অনেক বেশি।
এর মধ্যেই ঘটে গেল এক মর্মান্তিক ঘটনা। বাসরা নদীতে ডুবে মৃত্যু হল এক যুবকের। মেচপাড়া এলাকার ওই বাসিন্দার নাম পৌলচ মিঞ্জের। শনিবার সকালে স্থানীয়রা নদীতে তাঁর দেহ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেন। কালচিনি থানার পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, মৃত যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন এবং নদীতে নেমে স্রোতের তোড়ে ভেসে যান। তবে তদন্তকারীরা ঘটনার সব দিক খতিয়ে দেখছেন।