ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি বাণিজ্য নিয়ে ইতিবাচক আলোচনার আগেই ওয়াশিংটন চাপের কৌশল অব্যাহত রেখেছে। মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি ভারত মার্কিন ভুট্টা না কেনে, তবে তারা মার্কিন বাজারে প্রবেশাধিকার হারাতে পারে। তিনি আরও বলেন, শুল্ক কমানো না হলে ভারতের জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে, যদিও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছেন।
অ্যাক্সিওসের এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন বাণিজ্য সচিব দাবি করেছেন, ভারত-মার্কিন বাণিজ্য একমুখী। তিনি বলেন, 'ভারত আমাদের কাছে সব বিক্রি করে, কিন্তু আমাদের পণ্যে শুল্ক বসায় এবং আমাদের বাজারে প্রবেশের পথ বন্ধ রাখে।' তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, 'ভারত ১৪০ কোটি মানুষের নিয়ে গর্ব করে। কিন্তু কেন ১.৪ বিলিয়ন মানুষ সামান্য পরিমাণ মার্কিন ভুট্টা কিনবে না?তারা আমাদের কাছে সবকিছুর উপর শুল্ক আরোপ করে।' ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে মার্কিন বাণিজ্য সচিব বলেছেন, 'ভারতকে বলা হয়েছে, তোমার শুল্ক কমাও ও আমাদের সঙ্গে আমাদের মতো আচরণ কর। যেভাবে আমরা তোমাদের সঙ্গে ব্যবসা করি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বছরের পর বছর ধরে ভুল সংশোধন করেছে, তাই আমরা চাই যে এটি ঠিক না করা পর্যন্ত অন্যভাবে শুল্ক আরোপ করা হোক।' তাঁর কথায়, 'এটাই প্রেসিডেন্টের বাণজ্যি মডেল, হয় তুমি এটা মেনে নাও, নতুবা বিশ্বের সবচেয়ে বড় উপভোক্তার সঙ্গে ব্যবসা করতে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হও।'
ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েক মাস ধরে বাণিজ্য চুক্তির আশা দেখালেও ভারতের আমদানির উপর নতুন শুল্ক ৫০ শতাংশে দ্বিগুণ করে দেওয়ায় দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে ভারতের রাশিয়ার তেল কেনার জন্য ২৫ শতাংশ শুল্ক অন্যতম। এশিয়ার অন্য দেশগুলির তুলনায় ভারতের উপর শুল্কের হার অনেক বেশি। ট্রাম্প ও তার কর্মকর্তারা বলছেন, এতে ভারত ইউক্রেনের যুদ্ধকে অর্থায়ন করছে। আর এই অভিযোগ নয়া দিল্লি বারবার খারিজ করে দিয়েছে। ভারত কড়া বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত অন্যায্য, অযৌক্তিক এবং অনর্থক। জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত করতে ভারত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে বলেও জানিয়েছিল নয়া দিল্লি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বিভিন্ন বক্তৃতায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, দেশীয় পণ্যের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে নয়া দিল্লি।
ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি
কয়েক সপ্তাহের টানাপোড়েনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় তারা অগ্রগতি চায় এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও কথা বলবেন। ট্রাম্প এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী উভয়েই বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব দেখিয়েছেন। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, 'আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই বাণিজ্য নিয়ে চলা উত্তেজনা প্রশমন করার জন্য আলোচনায় বসবে। আমার খুব ভালো বন্ধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলতে আমি আগ্রহী। আমি আশাবাদী যে দুই মহান দেশের মধ্যে এই আলোচনা সফল পরিণতিতে পৌঁছবে।' নরেন্দ্র মোদীকে একজন মহান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করে ট্রাম্প লেখেন, তিনি সব সময় তাঁর বন্ধু হয়ে থাকবেন।এদিকে, চলতি সপ্তাহে নয়া দিল্লিতে আসছেন বাণিজ্যচুক্তি সংক্রান্ত মার্কিন প্রতিনিধিদলের প্রধান ব্রেন্ডন লিঞ্চ। তবে হাওয়ার্ড লুটনিক নতুন শর্তও জুড়েছেন।
ভুট্টা কেনার জন্য কেন চাপ?
বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি গোষ্ঠী জানিয়েছে, এই বছর কৃষকেরা চিনের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনার কারণে অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছেন। চিনের অর্ডার কমে যাওয়ায় ছোট ব্যবসা দেউলিয়া হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে নতুন বাজার হিসেবে দেখতে চাইছে, যা তার নির্বাচনী সমর্থক কৃষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উপর শুল্ক চাপ দিয়ে বাণিজ্য ও রাজনৈতিক কৌশল চালাচ্ছে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক
টিকটকের মালিকানা নিয়ে চলমান সমস্যার সমাধানে একটি চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে এসেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, শুক্রবার চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবেন। ট্রাম্প একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লিখেছেন, 'একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। এটি আমাদের দেশের তরুণদের খুবই পছন্দ এবং তারা খুব বেশি করে চেয়েছিল একে বাঁচিয়ে রাখতে।' মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানান, সোমবার মাদ্রিদে শুল্ক এবং অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনার সময় শর্ট-ভিডিও অ্যাপ টিকটক নিয়ে একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তি হলে টিকটক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে। মালিকানা সংক্রান্ত ইস্যুতে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত 'ডেডলাইন' রয়েছে টিকটকের। এই সময়ের মধ্যে যদি মার্কিন মালিকানা না হয়, তাহলে দেশটিতে এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে এই চুক্তি তাৎপর্যপূর্ণ।
এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হুমকি দিয়েছিল যে, টিকটকের মালিকানা হস্তান্তরের চুক্তির অংশ হিসেবে যদি চিন শুল্ক কমানো এবং প্রযুক্তিগত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি না ছাড়ে, তাহলে জনপ্রিয় এই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপটিকে নিষিদ্ধ করা হবে। বেসেন্ট আরও বলেন যে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে আরও এক দফা আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দুই পক্ষ অর্থ পাচার এবং অবৈধ ফেন্টানিল বাণিজ্য রোধে সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা করেছে।