স্ত্রী রাশিয়ান গুপ্তচর, পালিয়েছেন সন্তানকে নিয়ে। এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন হুগলির সৈকত বসু। সোমবার সেই মামলায় এবার কড়া নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি সূর্যকান্ত স্পষ্ট দিল্লি পুলিশ ও কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়ে দিয়েছেন, সৈকত বসুর শিশু সন্তানকে শীর্ষ আদালতের হেফাজতে ফেরানোর জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে। এই বিষয়ে আর সময় নষ্ট করা যাবে না।
এর আগে পুলিশ তদন্তে জেনেছিল, রুশ দূতাবাসের এক কর্মী সৈকতের স্ত্রী ভিক্টোরিয়াকে ভারত ছাড়তে সাহায্য করেছিলেন। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ওই কর্মীকে প্রয়োজনে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে কিনা, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখুক দিল্লি পুলিশ। বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, ‘ওই ব্যক্তিকে জেরা করলে হয়তো অনেক তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে। তবে এই বিষয়ে আদালত কোনও নির্দেশ দেবে না।' ভারত এবং রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এই সম্পর্কের খাতিরেই ভারত সরকারকে নিশ্চয়ই সহায়তা করবে রাশিয়া, পর্যবেক্ষণে আশা প্রকাশ করেছেন বিচারপতি সূর্যকান্ত। একইসঙ্গে দিল্লি পুলিশকে এই মামলায় ভর্ৎসনা করেছেন তিনি। মামলার পরবর্তী শুনানি দশ দিন পরে হতে পারে। তার আগে সুপ্রিম কোর্টে স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দিতে হবে দিল্লি পুলিশ ও বিদেশ মন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
পুলিশ সূত্রে খবর, রুশ বৌমা ভিক্টোরিয়াকে ট্যাক্সি ভাড়া করে দিয়েছিলেন দিল্লিতে রাশিয়ার দূতাবাসের এক কূটনীতিক। সেই ট্যাক্সি চেপেই ভিক্টোরিয়া তাঁর পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে বিহারে পৌঁছন। সেখান থেকে ভারত-নেপাল সীমান্ত পেরিয়ে চলে যান কাঠমান্ডুতে। ইতিমধ্যেই এই কথা সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ। রাশিয়ার দূতাবাসের কনসুলার ডিভিশনের প্রধান আর্থার গার্বস্ট নামে ওই কূটনৈতিকই পরে ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়েছিলেন বলে জানতে পেরেছিলেন তদন্তকারীরা।
ঘটনার সূত্রপাত
হুগলির চন্দননগরের বোসপাড়ার বাসিন্দা সৈকত বসু। কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন কাটিয়েছেন চিনে। সেখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় রাশিয়ান নাগরিক ভিক্টোরিয়া জিগালিনার। পরিচয় থেকে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে, প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। ২০১৭ সালে তাঁরা বিয়ে করেন এবং ২০১৯-এ ভারতে চলে আসেন। দেশে ফেরার পরে দিল্লিতে থাকতেন তাঁরা। এরপর ২০২০ সালে জন্ম হয় তাঁদের পুত্র সন্তান স্ট্যাভিওর। সৈকতের বাবা সমীর বসু ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন কর্তা। বসু পরিবারের অভিযোগ, ভিক্টোরিয়ার বাবা ছিলেন রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা ‘এফএসবি’-র প্রাক্তন আধিকারিক। ওই বিষয়ে তাঁরা অন্ধকারে ছিলেন। বৌমা ভারতীয় সেনার সদর দফতরে (পূর্ব হাইকম্যান্ড) যাওয়ার জন্য মাঝেমধ্যে জেদ করতেন বলে অভিযোগ শ্বশুরের। তাঁর সন্দেহ, বৌমা স্পাই হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।এদিকে, বিভিন্ন কারণে মতবিরোধ হওয়ায় সৈকত এবং ভিক্টোরিয়া আলাদা থাকতে শুরু করেছিলেন। সৈকতের দাবি, ভিক্টোরিয়া সন্তানকে শুধুমাত্র নিজের কাছে রাখার আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যান। আদালতের নির্দেশ ছিল, যৌথ ভাবে বাবা-মায়ের কাছে থাকবে স্ট্যাভিও। কিন্তু চলতি বছরের ৭ জুলাই হঠাৎই সন্তানকে নিয়ে উধাও হয়ে যান ভিক্টোরিয়া।এরপরই সন্তানকে ফিরে পেতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন সৈকত।