মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-র ডিরেক্টর হিসেবে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন কাশ প্যাটেল কী আদৌ যোগ্য? উটাহ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ কনজারভেটিভ নেতা চার্লি কার্ককের খুনের পরেই এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ডের তদন্তে তিনি বেশ কয়েকটি ভুল পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বলে প্রকাশ্যে এসেছে। যার মধ্যে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর অসতর্ক মন্তব্য, 'ঘাতককে গোয়েন্দা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।'
ফক্স নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত এফবিআই প্রধানের একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে যে কাশ প্যাটেল এফবিআই-র ডিরেক্টর পদ থেকে সরে যেতে পারেন। চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ডে ঘাতক শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার হলেও এক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য কঠোর সমালোচনা ও বিতর্কের মুখে পড়েছেন এফবিআই প্রধান। সেই সমালোচনার মুখে আগামী মঙ্গলবার ও বুধবার কাশ প্যাটেলকে সিনেট ও হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির সামনে হাজির হতে বলা হয়েছে। সেখানে এফবিআই কীভাবে কার্ক হত্যাকাণ্ডের তদন্তের বিষয়টি সামলেছে সেই প্রশ্নের উত্তর তাঁকে দিতে হবে। শুধু তাই নয়, তাঁর নিয়োগের পর থেকে রাজনৈতিক লড়াই এবং অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার কারণে বিভক্ত এফবিআইকে স্থিতিশীল করতে পারবেন কিনা সেই প্রশ্নও কাশ প্যাটেলকে মোকাবেলা করতে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন-অর্থমন্ত্রকের উপসচিবের মৃত্যুতে তোলপাড় দিল্লি, ধৃত ঘাতক BMW-র মহিলা চালক
চার্লি কার্ক হত্যার দু'দিন পর গত শুক্রবার এই ঘটনায়০ জড়িত সন্দেহে টাইলার রবিনসন নামে এক তরুণকে শনাক্ত ও আটক করে এফবিআই। ঘাতককে দ্রুততার সঙ্গে আটক করার জন্য প্যাটেলকে প্রশংসা করেছেন খোদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কিন্তু তাতেও সমালোচনা ও বিতর্ক থামছে না। রক্ষণশীল মার্কিনিরা বলতে শুরু করেছেন, প্যাটেল কি ১৩ হাজার এজেন্ট আর ৩৮ হাজার কর্মী নিয়ে দেশের শীর্ষ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধান হওয়ার যোগ্য? কার্ক হত্যার কয়েক ঘন্টা পরই প্যাটেলের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। খুনের পর গোয়েন্দারা যখন বিষয়টি তদন্ত করছেন, প্যাটেল তখন এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে ঘোষণা করেন, ‘আজকের ভয়াবহ গুলিবর্ষণের ঘটনায় চার্লি কার্কের জীবন কেড়ে নেওয়া ব্যক্তি এখন হেফাজতে।’ কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে সেটা ভুল প্রমাণিত হয়। প্যাটেল এর পরপরই পোস্ট করেন, হেফাজতে থাকা ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সিনেটের হুইপ রিপাবলিকান ডিক ডারবিন প্যাটেলের এই ভুলকে ‘অপেশাদার’ হিসাবে বর্ণনা করেন এবং তার পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এরপর তল্লাশি চলাকালীন গত বৃহস্পতিবার কাশ প্যাটেল এক এফবিআই কর্মীর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ওই কর্মী তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। যেমন সন্দেহভাজন বন্দুকবাজের ছবি দ্রুত তাকে দেখানো হয়নি। এপির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন-অর্থমন্ত্রকের উপসচিবের মৃত্যুতে তোলপাড় দিল্লি, ধৃত ঘাতক BMW-র মহিলা চালক
কার্ককে যেদিন হত্যা করা হয় সেদিনই অর্থাৎ গত বুধবার এফবিআই-র তিন সিনিয়র নির্বাহী কর্মকর্তা প্যাটেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। গত আগস্ট মাসে শুদ্ধি অভিযানের নামে ওই তিনজনকে বরখাস্ত করা হয়, যেটাকে তারা ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিশোধমূলক অভিযান হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। ফক্স নিউজের প্রতিবেদন অনুসারে, প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে যে হোয়াইট হাউসের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি এবং তার ডেপুটি টড ব্লাঞ্চের এফবিআই নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ক্যাশ প্যাটেলের ক্ষমতার উপর কোনও আস্থা নেই। উল্লেখ্য, সম্প্রতি একটি কলেজের অনুষ্ঠান চলাকালীন চার্লি কার্ককে গুলি করে খুন করা হয়। মাত্র ৩১ বছর বয়সি কার্কের গলায় গুলি লাগে এবং ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। খুনি বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে। খুনের ঘটনার পর তড়িঘড়ি তদন্তে নামে এফবিআই। গত বুধবার রাতেই একটি ছবি সামনে এনেছিল মার্কিন তদন্তকারী সংস্থা। এরপর প্রকাশ্যে আসে সিসি ক্যামেরার একটি ফুটেজ। ১০ সেপ্টেম্বরের ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২৩ মিনিট। কলেজের ছাদের উপর দিয়ে ছুটছে আততায়ী। এরপর ছাদের কিনারায় এসে নীচে ঝাঁপ দেয়। পরনে কালো ফুলহাতা টি-শার্ট। মাথায় টুপি, চোখে সানগ্লাস ও পিঠে ব্যাগ। শুরুতে এদিক-ওদিক দেখে মাঠের মধ্যে কিছুটা পথ দৌড়তে থাকে। পরে পার্কিং লটের কাছে এসে একেবারে ধীরেসুস্থে হাঁটতে থাকে টাইলার। একসময় রাস্তা পার করে জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যায় সে।