ভারতের সামুদ্রিক প্রতিরক্ষার ইতিহাসে নতুন মাইলফলক রচনা করল কলকাতার গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স (জিআরএসই) লিমিটেড। একই সঙ্গে ভারতীয় নৌবাহিনী তার বহরে যুক্ত করেছে আরও একটি দেশীয় যুদ্ধজাহাজ। শনিবার জিআরএসই ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত অগভীর জলের সাবমেরিন-বিধ্বংসী যুদ্ধজাহাজ 'অ্যান্ড্রোথ।' এটি আটটি এএসডব্লিউ এসডব্লিউসি-এর সিরিজের দ্বিতীয় জাহাজ। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতার পথে এটি বড় পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন-'যদি কোনও অবৈধ পদ্ধতি...,' বিহার 'SIR' নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি সুপ্রিম কোর্টের, কোন বার্তা ECকে?
'অ্যান্ড্রোথ' জাহাজটির নামকরণ হয়েছে লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জের অ্যান্ড্রোথ দ্বীপের নাম অনুসারে। যা ভারতের কৌশলগত সামুদ্রিক গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, প্রায় ৭৭ মিটার দৈর্ঘ্য, এবং ডিজেল ইঞ্জিন-ওয়াটারজেট সংমিশ্রণে চালিত এই যুদ্ধজাহাজ বর্তমানে ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে থাকা বৃহত্তম অগভীর জলযান। এই যুদ্ধজাহাজে রয়েছে দেশীয়ভাবে তৈরি ৩০ মিমি নৌ-সারফেস গান ‘অ্যান্ড্রোথ’-এ রয়েছে উন্নত কমব্যাট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, হালকা টর্পেডো ও সাবমেরিন-বিধ্বংসী রকেট। এর ফলে, উপকূলবর্তী অগভীর জলে নজরদারি, অনুসন্ধান ও সাবমেরিন দমন সব ক্ষেত্রেই জাহাজটি হবে কার্যকর।নৌবাহিনীর রিডআউটে বলা হয়েছে, এএসডব্লিউ এসডব্লিউসি জাহাজগুলিতে ৮০ শতাংশের বেশি দেশীয় সামগ্রী থাকবে, যার ফলে ভারতীয় উৎপাদন ইউনিটগুলি দ্বারা বৃহৎ আকারের প্রতিরক্ষা উৎপাদন কার্যকর করা নিশ্চিত করবে, যার ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।ইন্ডিয়ান রেজিস্টার অফ শিপিং-এর মানদণ্ড মেনে তৈরি এই জাহাজ ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পে আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্যকে আরও সুদৃঢ় করছে।
আরও পড়ুন-বাইশ গজেও বিধ্বস্ত! হ্যান্ডশেক বিতর্ক, ম্যাচ রেফারিকে সরাতে জয়ের ICC-র দ্বারস্থ পাকিস্তান
এর আগে ২০২৫ সালের ৮ মে জিআরএসই প্রথম জাহাজ আর্নালা হস্তান্তর করেছিল, যা ১৮ জুন কমিশন করা হয়। মাত্র চার মাসের ব্যবধানেই দ্বিতীয় জাহাজ সরবরাহ করে গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স আবারও তাদের দক্ষতা ও সময়নিষ্ঠতার প্রমাণ দিল। অ্যান্ড্রোথ তিনটি মেরিন ডিজেল ইঞ্জিনচালিত ওয়াটার জেটের সাহায্যে উচ্চগতিতে চলাচল করতে পারে। মাত্র ২.৭ মিটার গভীর জলেও এটি সাবলীলভাবে চলতে সক্ষম। ফলে উপকূলবর্তী অগভীর অঞ্চলেও সহজেই সাবমেরিন হুমকি শনাক্ত ও প্রতিরোধ সম্ভব হবে। প্রতিটি জাহাজে থাকবেন ৫৭ জন কর্মী, যার মধ্যে সাতজন কর্মকর্তা। বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যান্ড্রোথ নৌবাহিনীর অগভীর জলে সাবমেরিন-বিধ্বংসী ক্ষমতায় গুণগত উন্নতি ঘটাবে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনা সাবমেরিন ও অন্যান্য বহিরাগত শক্তির উপস্থিতি বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে এই জাহাজগুলি ভারতের উপকূল সুরক্ষায় আরও দৃঢ় প্রাচীর গড়ে তুলবে।