কখনও কুকুর, কখনও ট্র্যাক্টর! একের পর এক নজিরবিহীন ঘটনা বিহারে। এবার সমস্তিপুর জেলার মহিউদ্দিনগর থানার হাসানপুর গ্রামের বাসিন্দা হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেটের আবেদন জমা পড়েছে। বিহারে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। তারমধ্যে ফের এমন ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করল তৃণমূল কংগ্রেস।
ঘটনার সূত্রপাত
গত ২৯ জুলাই সমস্তিপুরে এক অজ্ঞাতপরিচয় বাসিন্দা একটি অনলাইন আবেদন জমা করেছেন।এই আবেদনে ট্রাম্পের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, পিতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে ফ্রেডরিক ক্রাইস্ট ট্রাম্প এবং মায়ের নাম মেরি অ্যান ম্যাকলিওড। এমনকী ওই অনলাইন আবেদনে দাবি করা হয়েছে ট্রাম্প সমস্তিপুর জেলার মহিউদ্দিনগর থানার হাসানপুর গ্রামের বাসিন্দা। সূত্রের খবর, ওই আবেদনে ছবি, আধার কার্ড, বারকোড, ঠিকানা সবকিছুই বিকৃত করা হয়েছে। ভেরিফিকেশনের পরে সেই আবেদন বাতিল করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। স্থানীয় একটি সাইবার ক্যাফে থেকে এই কাজ করা হয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
এই ঘটনায় মহিউদ্দিনগর নগর ব্লক অফিসের কর্মকর্তারা হতবাক। তবে এটাই একমাত্র বিস্ময় নয়, 'মাতা সীতা', 'শ্রী রাম' নামেও জাল তথ্য ও ছবি দিয়ে আবেদন জমা পড়েছে। এসব ক্ষেত্রে আধার কার্ড হ্যাক করে নাম, ঠিকানা ও ছবি সংযোজন করা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।আর এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই কেন্দ্রের শাসকদলকে আক্রমণ শুরু করেছে বিরোধীরা।
রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট নিয়ে সরব তৃণমূল
বিহারে রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেটের জন্য একের পর এক আজব আবেদন সামনে আসতেই আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদেরা। এক্স বার্তায় কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, '‘৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। সরকার তা নিয়ে আলোচনা করতে চাইছে না। সমস্তিপুর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে আবেদন জমা পড়েছে। কাকের নামেও ডোমিসাইল সার্টিফিকেটের আবেদন জমা পড়ছে।’ তিনি আরও বলেন, 'ভগবান রামের আবেদনপত্রে রাজা দশরথ এবং মা কৌশল্যাকে পিতা-মাতা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। গ্রামটি অযোধ্যা, কিন্তু এটি খাগরিয়া জেলায়, উত্তরপ্রদেশে নয়। এটাই এসআইআর আবেদনের অবস্থা। এগুলো মাত্র দুই বা তিনটি ঘটনা... সার্কাস চলতে। নির্বাচন কমিশনের পাগলামি থেকে একমাত্র ভগবান রামই আমাদের বাঁচাতে পারেন!'
অন্যদিকে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ বলেন, 'বিহারে নির্বাচন কমিশন যে বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া চালাচ্ছে তাতে ইতিমধ্যেই কিছু চমকপ্রদ এবং আশ্চর্যজনক অসঙ্গতি সামনে এসেছে। আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি যে কুকুরের নামে একটি আবেদন দাখিল করা হয়েছে...স্পষ্টতই এই পুরো প্রক্রিয়াটি নিম্নমানের... তাড়াহুড়ো করে করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি পুনর্বিবেচনা করতে হবে... এটি অত্যন্ত নিম্নমানের। অনেক অসঙ্গতি রয়েছে।'
এই ঘটনা আরও একবার বিহারের বিভিন্ন জেলায় চলতে থাকা ভুয়ো রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট কেলেঙ্কারির কাহিনি সামনে এনে দিল। এর আগেও পাটনা, পূর্ব চম্পারণ, নালন্দা-সহ একাধিক জেলায় ‘ডগ বাবু’, ‘নিতীশ কুমারী’, এমনকি ‘সোনালিকা ট্রাক্টর’-এর নামে রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট চেয়ে অনলাইন আবেদন জমা পড়েছে।তবে প্রশাসনিক আধিকারিকরা আশ্বাস দিয়েছেন, আগামী দিনে ভুয়ো আবেদন রুখতে প্রযুক্তিগত অডিট, আরও কঠোর কেওয়াইসি যাচাই এবং লগইন নিরাপত্তা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।