সম্প্রতি রাজধানী দিল্লিতে হইচই পড়ে যায়। ঐতিহাসিক লালকেল্লায় হানা দেয় চোর।খোয়া যায় প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের দু'টি সোনার কলসি। এছাড়াও অন্যান্য মূল্যবাণ জিনিসপত্রও চুরি হয়।টানা তল্লাশির পর অবশেষে উত্তরপ্রদেশ থেকে চোরকে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশের অপরাধ শাখা। চুরি যাওয়া জিনিসগুলি ব্যবসায়ী সুধীর জৈনের মালিকানাধীন ছিল, যিনি প্রতিদিন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য মূল্যবান জিনিসপত্র আনতেন।
গত বুধবার লালকেল্লা প্রাঙ্গণের ১৫ আগস্ট পার্কে অনুষ্ঠিত দশ দিনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান 'দশলক্ষণ মহাপর্ব' চলাকালীন এই চুরির ঘটনা ঘটে। সিসিটিভিতে দেখা গিয়েছে যে, সন্দেহভাজন ব্যক্তি জৈন পুরোহিতের ছদ্মবেশে মূল্যবান জিনিসপত্র ভর্তি একটি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। অনুষ্ঠান চলাকালীনই সুযোগ বুঝে সেই কলসিটি চুরি করে পালায় চোর। সেদিন থেকেই উদ্ধারকার্য শুরু করেছিলেন দিল্লি পুলিশ। এমনিতেই লালকেল্লা নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত সংবেদনশীল। কারণ ঐতিহাসিক ভবনটি রক্ষার জন্যে সিআইএসএফ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। সেখান থেকে কীভাবে ঐতিহাসিক হিরের কলসি চুরি হয়, সেই নিয়েই উঠে ছিল প্রশ্ন। তবে শেষ পর্যন্ত চুরি যাওয়া জিনিসগুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ।জানা গিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে, উত্তরপ্রদেশের হাপুর থেকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশ জানিয়েছে, একটি নয়, তিনটি কলস চুরি হয়েছে, যার মধ্যে একটি উদ্ধার করা হয়েছে। অন্য অভিযুক্ত এবং দুটি কলসি উদ্ধারের জন্য অভিযান চলছে।
সূত্রের খবর, গত ৩ সেপ্টেম্বর লালকেল্লায় জৈন সম্প্রদায়ের ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা-সহ আরও অনেকে। সকলের সামনেই কলসি চুরি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অভিযুক্ত ভূষণ ভর্মা স্বীকার করেছে যে, অনুষ্ঠানের সময়ে ভক্তদের সঙ্গে তিনি মিশে গিয়েছিলেন। কারণ তাঁর পরনেও ধুতি পাঞ্জাবি ছিল। ওম বিড়লা অনুষ্ঠানে আসার সময় কিছু গোলযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, সেই সুযোগে তিনি হিরে খচিত সোনার কলসি নিয়ে পালায়। তদন্ত শুরু হলে সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায় যে, ধুতি পরা এক ব্যক্তি কৌশলে উপাসনালয়ে যাচ্ছেন এবং পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কলসিটি ব্যাগে পুরে সেখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে এই মামলায় একাধিক দল কাজ করেছে। চুরি হওয়া এই কলসিটি কেবল সোনা ও রত্নখচিত অলংকার ছিল না, বরং জৈন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দৈনন্দিন উপাসনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। এটি প্রায় ৭৬০ গ্রাম সোনা এবং হীরা, পান্না এবং রুবির মতো প্রায় ১৫০ গ্রাম মূল্যবান রত্ন দিয়ে খচিত ছিল। এই চুরির বিষয়ে, আয়োজক কমিটির সদস্য পুনীত জৈন বলেছেন, কলসিটি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং পূজার সময় প্রতিদিন একটি বিশেষ মঞ্চে স্থাপন করা হত। শুধুমাত্র ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা অনুমোদিত ব্যক্তিদের মঞ্চে প্রবেশের অনুমতি রয়েছে।