'ভগবান শ্রীকৃষ্ণই প্রথম মধ্যস্থতাকারী ছিলেন।' এমনই মন্তব্য করে বাঁকে বিহারী মন্দির মামলায় উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং মন্দির কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নিজেদের মধ্যে মেটানোর পরামর্শ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।একই সঙ্গে মন্দির তহবিল ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে গত ১৫ মে-র যে রায় দেওয়া হয়েছিল, তা স্থগিত রাখার কথাও জানান বিচারপতিরা।
বাঁকে বিহারী মন্দিরের অর্থে উত্তরপ্রদেশ সরকার করিডর নির্মাণে এগোচ্ছে।এই ইস্যুতে সোমবার কঠোর অবস্থান নিয়েছে শীর্ষ আদালত।প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, অবসারপ্রাপ্ত এক উচ্চ আদালতের বিচারপতি বা জেলার বিচারককে নিয়ে তৈরি হবে একটি অন্তর্বর্তী কমিটি, যারা মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন। রাজ্য সরকারের অর্ডিন্যান্স সাংবিধানিক বৈধতা পাবে কিনা, তা বিচার করবে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। তার আগে পর্যন্ত মন্দির তহবিল ব্যবহার ও করিডর প্রকল্পে রাজ্যের হস্তক্ষেপ বন্ধ রাখার পক্ষেই মত দিয়েছেন শীর্ষ আদালতের বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ।বিচারপতি জানিয়েছেন, মন্দিরের পরিকাঠামো ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ওই অন্তর্বর্তী কমিটিকে কিছু অর্থব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হতে পারে।
আরও পড়ুন-গুয়ারেজ সেক্টর দিয়ে অনুপ্রবেশ! পহেলগাঁও হামলার আগের দিন কোথায় ছিল জঙ্গিরা ?
সোমবারের শুনানিতে শীর্ষ আদালত প্রশ্ন করে, ‘সরকার এত তড়িঘড়ি করল কেন? যে মামলায় মন্দিরের নামই ছিল না, সেখানে সরকার হঠাৎ কোন ক্ষমতায় তহবিল ব্যবহারের অনুমতি পেল?’ আদালতের মতে, যেহেতু রাজ্যের প্রস্তাবিত অর্ডিন্যান্সে মন্দির পরিচালনায় হস্তক্ষেপের বিষয় রয়েছে, তাই আগে তার সাংবিধানিক বৈধতা যাচাই করতেই হবে।প্রশ্ন উঠেছে, সরকার যদি প্রকল্প করতেই চায়, তবে সংবিধান অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিয়ে কেন জমি অধিগ্রহণ করল না? কেন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়া হল? গত ১৫ মে-র এক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারকে করিডরের জন্য মন্দির তহবিল ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু এদিন আদালতের পর্যবেক্ষণ, সে সময়ে মন্দির বা পরিচালন সমিতির পক্ষ থেকে কেউ ছিল না, বিষয়টি একতরফাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। আদালতের মন্তব্য, 'এটা তো নো ম্যান'স ল্যান্ড ছিল না, মন্দিরের তরফে কাউকে তো শোনা উচিত ছিল।' বিচারপতিরা বলেন, 'আমরা একটি প্রস্তাব করছি... (পূর্ববর্তী) রায়ের একটি অংশ আমরা স্থগিত করব... আমাদের অবসারপ্রাপ্ত এক উচ্চ আদালতের বিচারপতি বা জেলার বিচারককে নিয়ে তৈরি হবে একটি অন্তর্বর্তী কমিটি, যাদের মন্দির পরিচালনার ট্রাস্টি হিসেবে রাখা হবে...।'
আগের মন্দির পরিচালন সমিতির অভিযোগ, কয়েক প্রজন্ম ধরে তাঁদের পরিবার এই মন্দির চালিয়ে আসছিল। সেই পরিবারকে বিনা আলোচনায় ছেঁটে ফেলে রাজ্য সরকার নতুন ট্রাস্ট গঠন করেছে এবং অর্ডিন্যান্স এনে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে।এর আগে ২০২৪ সালের মে মাসেই বিচারপতি বি ভি নাগরত্ন ও বিচারপতি সত্য চন্দ্র শর্মার বেঞ্চ প্রশ্ন তুলেছিল, 'যদি রাজ্য সরকার এভাবে ব্যক্তিগত মামলায় ঢুকে পড়ে, তবে দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যাহত হতে পারে।'
আরও পড়ুন-গুয়ারেজ সেক্টর দিয়ে অনুপ্রবেশ! পহেলগাঁও হামলার আগের দিন কোথায় ছিল জঙ্গিরা ?
১৮৬২ সালে নির্মিত শ্রীবাঁকে বিহারী মন্দির উত্তর ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় তীর্থস্থান। এটি পরিচালনা করেন 'শেবায়েত' নামে এক পুরোহিত পরিবার, যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মন্দির পরিচালনা করে আসছেন।২০২২ সালের জন্মাষ্টমীর সময় ভিড়ের চাপে মন্দিরে প্রাণহানি ঘটে।মৃত্যু হয় দুই জনের। এরপরই ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে একটি করিডর নির্মাণের নির্দেশ দেয়, যাতে ভিড় সামলানো যায় ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।এই করিডর প্রকল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।