পহেলগাঁওয়ে নিরীহ পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ক্ষত এখনও দগদগে। হামলায় ইসলামাবাদের ভূমিকা নিয়ে যখন কাটাছেঁড়া চলছে, সেই আবহেই প্রমাণিত হল জম্মু ও কাশ্মীরের দাচিগামে ‘অপারেশন মহাদেব’-এর সময়ে নিহত ওই তিন জঙ্গিই পাকিস্তানের নাগরিক। শুধু তাই নয়, ২০২২ সালের মে মাসে তারা গুরেজ সেক্টরের কাছ দিয়ে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, সেই সময়ই প্রথম তারা পাকিস্তানে বসে রেডিও বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করে। তারপরেই এ দেশে অনুপ্রবেশ করে।
গত ২৮ জুলাই ‘অপারেশন মহাদেব’-এ নিহত হয় সুলেমান শাহ ওরফে ফয়জল জাট, আবু হামজা ওরফে আফগান এবং ইয়াসির ওরফে জিবরান।সূত্রের খবর, নিহত তিন জঙ্গিই লস্কর-ই-তৈবার সদস্য ছিল বলেও প্রমাণ মিলেছে এবং তারাই পহেলগাঁয়ে নৃশংস হামলার নেপথ্যর কুশীলব।সুলেমান লস্করের একজন এ প্লাস প্লাস কমান্ডার ছিল। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সুলেমানই পহেলগাঁও হামলার মূলচক্রী। হামলার অন্যতম প্রধান বন্দুকবাজও ছিল। হামজা এবং ইয়াসির এ-গ্রেড লস্কর কমান্ডার ছিল। নিহত জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের জারি করা দু’টি ল্যামিনেটেড ভোটার আইডি কার্ড। একটির মালিক সুলেমান শাহ, যার নাম লাহোর (এনএ-১২৫) কেন্দ্রের ভোটার তালিকায় রয়েছে। অন্যজন আবু হামজা, সে গুজরানওয়ালা (এনএ-৭৯) কেন্দ্রের ভোটার।এছাড়াও, ধ্বংসপ্রাপ্ত স্যাটেলাইট ফোন থেকে উদ্ধার হওয়া একটি মাইক্রো-এসডি কার্ডে পাকিস্তানের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন সংস্থার বায়োমেট্রিক রেকর্ড মেলে তিন জনেরই আঙুলের ছাপ, মুখের ডিজিটাল ফর্ম ও পারিবারিক তথ্য। ঠিকানা হিসাবে দেখা গিয়েছে কাসুর জেলার চাঙ্গা মাঙ্গা ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের কোইয়ান গ্রামের উল্লেখ।
আরও পড়ুন-বাংলাদেশে দুরবস্থা! এক বছরে গাজীপুরে বন্ধ ৭২টি কারখানা, দাবি রিপোর্টে
নিহত ৩ জঙ্গির ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয়েছে করাচিতে তৈরি জনপ্রিয় চকোলেট ‘ক্যান্ডিল্যান্ড’ ও ‘চোকোম্যাক্স’-এর মোড়ক। এসবও প্রমাণ করে, নিহতরা পাকিস্তান থেকেই ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল।মোড়কের গায়ে যে লট নম্বর ছিল, তা থেকে জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালের মে মাসে ওই চকোলেটগুলি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফ্ফরাবাদে পাঠানো হয়েছে।পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদীদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া একে-১০৩ রাইফেলের স্ট্রিয়েশন মার্কস (চিহ্ন) মিলে গেছে গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হামলায় ব্যবহৃত ৭.৬২x৩৯ মিমি শেলের সঙ্গে। ওইদিন ২৬ জন নিরীহ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিল ওই জঙ্গিরা। এছাড়া, পহেলগাঁওয়ে পাওয়া এক ছেঁড়া শার্টে থাকা রক্তের ডিএনএ মিলিয়ে নেওয়া হয়েছে দাচিগামে নিহত তিন জঙ্গির মৃতদেহের সঙ্গে।
আরও পড়ুন-বাংলাদেশে দুরবস্থা! এক বছরে গাজীপুরে বন্ধ ৭২টি কারখানা, দাবি রিপোর্টে
গোয়েন্দাদের মতে, এই তিন জঙ্গি মে মাসে ২০২২-এ গুরেজ সেক্টর দিয়ে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। পাক-অধিকৃত কাশ্মীর থেকে তাদের প্রথম রেডিও চেক-ইনও তখন ধরা পড়ে।পহেলগাঁ হামলার আগের দিন, ২১ এপ্রিল তারা বৈসরন উপত্যকার কাছে একটি মৌসুমি কুঁড়েঘরে রাত কাটায়। কাশ্মীরি দুই স্থানীয় বাসিন্দা, পরভেজ ও বশির আহমদ তাদের আশ্রয় ও খাবার দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে।হামলার দিন অর্থাৎ ২২ এপ্রিল দুপুর আড়াইটেয় বৈসরনে হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা পালিয়ে যায় দাচিগামের ঘন অরণ্যের দিকে। সুলেমান শাহের হাতে থাকা ‘গারমিন’ ব্র্যান্ডের জিপিএস ঘড়ি থেকে প্রাপ্ত লোকেশন ডেটাও হামলার সময় প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া গুলির উৎসস্থলের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে গেছে।
৩ জঙ্গিকে নিকেশ করার পরে ঘটনাস্থল থেকে যে অস্ত্র মিলেছে, তা থেকে গুলি চালানো হয়েছিল পহেলগাঁওয়ে, সেই প্রমাণও মিলেছে। গত সপ্তাহেই লোকসভায় সে কথা জানিয়েছেন খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।কিন্তু পহেলগাঁও হামলার পরে তিন জঙ্গির যে স্কেচ পুলিশ প্রকাশ করেছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।কারণ গত ২৪ এপ্রিল হাশিম মুসা, আলি ভাই ওরফে তালহা এবং আদিল হুসেন ঠোকরের স্কেচ প্রকাশ করে পুলিশ। ‘অপারেশন মহাদেব’-এরপরে এনআইএ জানায়, ২০২৪ সালে একটি এনকাউন্টারে নিহত এক জনের ফোন থেকে ওই তিন জনের ছবি মিলেছিল। তাদের সঙ্গে পহেলগাঁও জঙ্গিদের মিল নেই।