মাস দুয়েক আগেই বৃহত্তম আইটি পরিষেবা সংস্থা টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস বা টিসিএসের কর্মী ছাঁটাই নিয়ে দেশজুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল। কর্মীসংখ্যার ২ শতাংশ অর্থাৎ ১২ হাজারেরও বেশি কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রচুর আলোচনা, চর্চা হয়। এই ঘোষণার পর থেকেই নানা পদমর্যাদার টিসিএস কর্মীদের মনে আশঙ্কার ঢেউ খেলছে। গত কয়েক সপ্তাহে ফোর্সড রেজিগনেশন এবং আকস্মিক পদত্যাগের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে কর্মীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা এবং উদ্বেগ তীব্র আকার ধারণ করেছে।
আইটি ইউনিয়ন, কর্মী এবং অন্যান্য অংশীদারদের ধারণা যে, ছাঁটাই হওয়া কর্মীর প্রকৃত সংখ্যা সংস্থার তরফ থেকে যা বলা হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। যদিও সংখ্যাটি কেউই নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে একাধিক সূত্রে খবর, ছাঁটাই হওয়া কর্মীর সংখ্যা ৩০ হাজারেরও বেশি হতে পারে। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক জাতীয় স্তরের আইটি ইউনিয়নের একজন মধ্যস্তরের টিসিএস কর্মী মানি কন্ট্রোলকে বলেন, 'জুন মাস থেকে প্রায় ১০ হাজার কর্মী সরাসরি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ছাঁটাইয়ের সংখ্যা সহজেই ৩০ হাজারেরও বেশি হতে পারে। যেহেতু কর্মীদের নিজেদের পদত্যাগ করতে বলা হচ্ছে এবং সংস্থা তাঁদের ছাঁটাই করছে না, তাই এই সংখ্যাগুলি টিসিএসের রেকর্ডে দেখা যাবে না। হয়তো কেবল তাদের চাকরিচ্যুতির পরিসংখ্যানেই থাকবে।' অন্যদিকে, গত কয়েক মাস ধরে অল ইন্ডিয়া আইটি অ্যান্ড আইটিইএস এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন, ফোরাম ফর আইটি এমপ্লয়িজ, ইউনিয়ন অফ আইটি অ্যান্ড আইটিইএস এমপ্লয়িজ, কর্ণাটক স্টেট আইটি/আইটিইএস এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন-সহ বেশ কয়েকটি আইটি কর্মী ইউনিয়ন টিসিএসের ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং প্রচার চালাচ্ছে।
তবে কোম্পানির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র এই বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে বলেছে, ইউনিয়নগুলি যে বিপুল সংখ্যক কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা উল্লেখ করেছে তা পুরোটাই মনগড়া। নতুন নতুন চুক্তির কাজ অর্জনের পর বিশাল স্তরের কর্মীদের ছাঁটাই করা হলে টিসিএস কাজ করতে পারবে না। মানি কন্ট্রোলকে টিসিএসের একজন মুখপাত্র বলেন, 'এই জল্পনাগুলি ভুল এবং বিভ্রান্তিকর। যেমনটি আগে জানানো হয়েছিল, ছাঁটাইয়ের প্রভাব আমাদের কর্মী সংখ্যার ২ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ।'
বিশ্বাসঘাতকতার অনুভূতি
গত ১৩ বছর ধরে টিসিএস-এ কাজ করছিলেন ৩৫ বছর বয়সি রোহন (নাম পরিবর্তিত)। তিনি বলেন, 'হিউম্যান রিসোর্স (এইচআর) এবং রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ (আরএমজি) দ্বারা পাঁচ মাস ধরে হয়রানির পর তাঁকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।' যখন তাঁকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল, তখন তিনি অনুভব করেছিলেন যে 'টাটা গ্রুপের সংস্থা তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি সংস্থার প্রতি অনুগত ছিলেন।' যদিও রোহন পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, পরে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে আইটি ফার্ম তাঁকে বরখাস্ত করে দেয়। তিনি দাবি করেছেন যে, তিনি যখন বেঞ্চে ছিলেন, তখন তাঁকে ৬-৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আদায় করতে বলা হয়েছিল। তাঁর গ্র্যাচুইটি এবং বেতনভুক্ত ছুটি থেকে মাত্র অর্ধেক টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়েছিল, বাকিটা টিসিএস দ্বারা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল।