গাজায় যুদ্ধ শেষ করার জন্য মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই প্রস্তাবকে মধ্যপ্রাচ্য সহ গাজা উপত্যকায় দীর্ঘমেয়াদী এবং স্থায়ী শান্তি, নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের সঠিক এবং ব্যবহারিক পথ হিসাবে অভিহিত করেছেন মোদী। মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়া এক্স-এ এক পোস্টে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। প্যালেস্টাইন ও ইজরায়েল, অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলি ট্রাম্পের এই প্রস্তাব মেনে নেবে বলে আস্থা প্রকাশ করেছেন মোদী।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'গাজা সংঘাতের অবসানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ব্যাপক পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, সেটাকে আমরা স্বাগত জানাই। এটি প্যালেস্তিনীয় ও ইজরায়েলি জনগণের পাশাপাশি বৃহত্তর পশ্চিম এশীয় অঞ্চলের জন্য দীর্ঘমেয়াদী এবং স্থায়ী শান্তি, নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের একটি বাস্তব পথ তুলে ধরবে। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্যোগে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং সংঘাতের অবসান ঘটাবে। আশা করি, শান্তি নিশ্চিত করার এই প্রচেষ্টাকে সবাই সমর্থন করবে।'
এদিকে গাজা শান্তি পরিকল্পনাকে সমর্থন করার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার গাজা শান্তি পরিকল্পনার ঘোষণা করেন। গাজায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধ থামিয়ে সেখানে শান্তি ফেরার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর হোয়াইট হাউস সফরের সময়ই এই শান্তি প্রস্তাব প্রকাশ করা হয়। এই পরিকল্পনার অনুযায়ী, গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, প্যালেস্তিনীয় ভূখণ্ড থেকে ইজরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, বন্দি মুক্তি এবং প্যালেস্তিনীয় ভূখণ্ডে একটি নতুন সরকারের রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে উভয় পক্ষের চুক্তিতে ইজরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা হবে। এবং এর সাথেই গাজায় যুদ্ধ অবিলম্বে শেষ হবে। পাশাপাশি হামাসের হাতে থাকা সব বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। হোয়াইট হাউজের শান্তি প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, গাজায় একটি অস্থায়ী অরাজনৈতিক সরকার গঠন করা হবে। গাজার প্রশাসন পরিচালনের দায়িত্ব থাকবে তাদেরই ওফর। এদিকে ইজরায়েল গাজা স্ট্রিপটি দখল করবে না। গাজার অস্থায়ী সরকারে প্যালেস্তিনীয় এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। প্যালেস্তিনীয়দের গাজা ত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে না এবং ইজরায়েলি সামরিক বাহিনী প্যালেস্তিনীয় ভূখণ্ড থেকে প্রত্যাহার শুরু করবে। একবার উভয় পক্ষের কাছ থেকে শান্তি প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে হামাস নিরস্ত্রীকরণ করবে। ২০২৩ সালের ৭ অকটোবরে হামাস যে সকল প্যালেস্তিনীয়কে বন্দি করেছিল, তাদের জীবিত বা মৃত অবস্থায় মুক্ত করা হবে।
হামাস নিয়ন্ত্রিত প্যালেস্তিনীয় ভূখণ্ডে একটি টেকনোক্র্যাটিক, অরাজনৈতিক প্যালেস্তিনীয় কমিটি গঠন করা হবে। তারাই সরকারি পরিষেবা এবং দৈনন্দিন প্রশাসনিক পরিচালনা চালাবে। ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন একটি 'বোর্ড অব পিস' এই কমিটির তত্ত্বাবধানে থাকবেন এবং এতে ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ অন্যান্য বিশ্ব নেতারা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। গাজার অভ্যন্তরে ইজরায়েলি 'নিরাপত্তা পরিধির উপস্থিতি' বজায় রাখবে। এর অর্থ হতে পারে যে ইজরায়েল গাজার অভ্যন্তরে একটি বাফার জোন রাখবে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, গাজায় ভবিষ্যতে প্যালেস্তিনীয় জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসের কোনও ভূমিকা থাকবে না। নেতানিয়াহু শান্তি প্রস্তাব গ্রহণ করলেও হামাস এখনও শান্তি পরিকল্পনার বিষয়ে সাড়া দেয়নি।