মার্কিন কোম্পানিগুলিতে বিদেশি কর্মীদের নিয়োগে রাশ টানতে চান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর সেই লক্ষ্যে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন তিনি। ঘোষণাপত্র অনুযায়ী, এবার এইচ-১বি ভিসার জন্য বছরে এক লক্ষ মার্কিন ডলার দিতে হবে। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এই নিয়ম কার্যকর হবে। আর তার আগেই এইচ-১বি ভিসা প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিলেন মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক।
নিউজ নেশনকে এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সহযোগী বর্তমান ভিসা প্রক্রিয়াটিকে 'ভুল' বলে অভিহিত করেছেন। কারণ, অত্যন্ত কম খরচের বিদেশিদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ এবং তাদের পরিবার নিয়ে আসার অনুমতি দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, 'ফেব্রুয়ারি ২০২৬ থেকে নতুন ফি কার্যকর হবে। তবে এখন থেকে ২০২৬ পর্যন্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসবে।' তিনি আরও বলেন, 'ভিসার আবেদনের জন্য এক লক্ষ মার্কিন ডলার ফি করা হয়েছে, কিন্তু মানুষের উপর অতিরিক্ত চাপ দেওয়া উচিত নয়। তবে আমার মনে হয় সামনে আপনারা একটা সত্যিকারের পরিবর্তন দেখতে পাবেন। আর আমি আশা করি এটাই ঘটবে।' মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক জানান, এইচ-১বি ভিসার জন্য লটারি সিস্টেম কীভাবে কাজ করবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। তাঁর কথায়, 'এখনও পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য এককালীন এক লক্ষ মার্কিন ডলার ফি প্রযোজ্য হবে। তবে একটা লটারি ব্যবস্থা ছিল। এইচ-১বি একটা লটারি। বিশ্বের দুটি বৃহত্তম প্রযুক্তি সংস্থায় প্রধান তাঁকে বলেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসা দক্ষ কর্মীদের জন্য লটারি ব্যবস্থা অদ্ভুত।'
লটারি ব্যবস্থা নিয়ে তিনি আরও বলেন, 'এর আসলে কোন অর্থ নেই। ১৯৯০ সালের এইচ-১বি প্রক্রিয়াটি একরকমভাবে হত্যা করা হয়েছে, এবং এই ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য ঐক্যমত্য রয়েছে।' তিনি আরও বলেছেন, এইচ-১বি লটারির মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হচ্ছে, যা বর্তমানে ৭-১০ গুণের বেশি আবেদনপ্রাপ্ত। তার মতে, ভিসাগুলি প্রধানত প্রযুক্তি পরামর্শদাতাদের জন্য ব্যবহার হচ্ছে, যা মূল উদ্দেশ্যের বিপরীত। হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, লটারি নির্ধারিত করা দরকার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত শুধুমাত্র দক্ষ ব্যক্তিদের যথাযথ চাকরি দেওয়া। ডাক্তার, শিক্ষক এবং উচ্চযোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য ভিসা থাকা উচিত। তবে প্রকৌশলীদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র উচ্চ বেতনপ্রাপ্ত ও দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া উচিত। এই প্রেক্ষিতে, শ্রম দফতর ‘প্রজেক্ট ফায়ারওয়াল’ নামের একটি এইচ-১বি বাস্তবায়ন উদ্যোগ চালু করেছে। এর মাধ্যমে উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন আমেরিকান শ্রমিকদের অধিকার, বেতন এবং কর্মসংস্থানের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। মার্কিন শ্রম সচিব লরি চাভেজ-ডেরেমার বলেছেন, 'এই উদ্যোগের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে যে কোন নিয়োগকর্তা এইচ-১বি ভিসা প্রক্রিয়ার অপব্যবহার করতে পারবে না এবং যোগ্য আমেরিকানদের চাকরিই প্রথমে দেওয়া হবে।'
সম্প্রতি মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক সম্প্রতি এইচ-১বি ভিসার ফি বৃদ্ধির ঘোষণা করেন। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে কোম্পানিগুলিকে প্রতিটি এইচ-১বি ভিসার জন্য বছরে এক লক্ষ মার্কিন ডলার দিতে হবে। লুটনিক বলেন, 'এইচ-১বি ভিসার জন্য বছরে এক লক্ষ ডলার, এবং সব বড় কোম্পানি এতে সম্মত হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।' এই পদক্ষেপের ফলে বিদেশি প্রযুক্তি কর্মীদের নিয়োগের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, 'এই নীতির লক্ষ্য মার্কিন স্নাতকদের অগ্রাধিকার দেওয়া। যদি কাউকে প্রশিক্ষণ দিতেই হয়, তাহলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে সদ্য পাশ করা শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিন। আমেরিকানদের প্রশিক্ষণ দিন। অন্যদের চাকরি কেড়ে নিতে দেবেন না।' যদিও হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট পরে এক্স-এ স্পষ্ট করে জানান, যারা ইতিমধ্যে এইচ-১বি ভিসাধারী এবং বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন, তাদের পুনরায় প্রবেশের জন্য নতুন ফি প্রযোজ্য হবে না।