মুম্বইয়ের দাদর ইস্টের একটি বিলাসবহুল টাওয়ারে বসবাসকারী ৭৩ বছর বয়সি প্রবীণ নাগরিকের কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করল জালিয়াতরা। প্রতারণার শিকার সেই বৃদ্ধি একটি বহুজাতিক সংস্থার প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। সাইবার অপরাধীরা সেই বৃদ্ধের কাছ থেকে ৭০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ। রিপোর্ট অনুযায়ী, নিজেকে জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) শীর্ষ কর্মকর্তা বলে দাবি করে সেই বৃদ্ধকে ফোন করেছিল এক জালিয়াত। আরকে মার্গ পুলিশ সোমবার সেই বৃদ্ধের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা ভুক্তভোগীকে 'ডিজিটাল হেফাজতে' রেখে ভয় ও চাপের পরিবেশ তৈরি করেছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, গত সপ্তাহেই এ ঘটনা শুরু হয়। বৃহস্পতিবার দিল্লির এটিএস অফিসার বিনীতা শর্মা নামে এক মহিলার নামেফোন পান সেই বৃদ্ধ। সেই জালিয়াত ফোনে দাবি করে, সে নাকি পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার তদন্ত করছে এবং এই মামলায় বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ি, রাজনীতিবিদ এবং বিল্ডারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফোন করা সেই মহিলা বৃদ্ধকে ভয় দেখিয়ে বলেন যে সন্ত্রাসবাদীদের সাহায্য করার অভিযোগে তার নামও উঠে এসেছে এবং মামলাটি এখন এনআইএ-র কাছে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। এরপরে ভিকটিমের সাথে ভিডিয়ো কলে একজন ব্যক্তি যোগাযোগ করে। সে নিজেকে এনআইএ অফিসার প্রেমকুমার গৌতম বলে পরিচয় দিয়েছিল। সে পুলিশের ইউনিফর্মে বসেছিল এবং অভিযানের কথিত ভিডিয়ো এবং নথি সেই বৃদ্ধকে দেখায় সে। এমনকী সেই জালিয়াত ভুক্তভোগী বৃদ্ধকে একটি ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা পর্যন্ত দেখিয়েছিল।
শুক্রবার, ভুক্তভোগী তৃতীয় কল পেয়েছিলেন। এবার ফোন করা ব্যক্তি নিজেকে এনআইএ প্রধান সদানন্দ দেতে বলে পরিচয় দেন। সেই জালিয়াত বলে, ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলা দায়ের করা হবে। এরপরে তিনি ভুক্তভোগীর কাছ থেকে তার সমস্ত বিনিয়োগের তথ্য চেয়ে নেয় - ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ফিক্সড ডিপোজিট, স্টক মার্কেট এবং বিদেশি অ্যাকাউন্ট। অভিযুক্ত জালিয়াত নাকি বলে, সব তহবিল বৈধ প্রমাণ করতে হলে তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে হবে, যা তদন্তের পর ফেরত দেওয়া হবে। ভুক্তভোগী সেই মতো ৭০ লক্ষ টাকা স্থানান্তর করেছিলেন জালিয়াতদের অ্যাকাউন্টে।
জালিয়াতরা ভুক্তভোগী এবং তার স্ত্রীকে ২৫ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডিজিটাল গ্রেফতার করে রেখেছিল। সেই সময় তাদের মোবাইল ও অন্যান্য ডিভাইস ব্যবহার করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এই সময় বারবার আরও টাকা চাইলে সন্দেহজনক হয়ে ওঠে ভুক্তভোগী। অবশেষে, তিনি আরএকে মার্গ পুলিশের কাছে যাওয়ার সাহস দেখান। পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে গুরুতর ধারায় মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ অফিসারের মতে,'অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারা ২০৪ (সরকারি কর্মচারীর ছদ্মবেশ ধারণ), ২০৫ (সরকারি কর্মচারীর ইউনিফর্ম / চিহ্নের প্রতারণামূলক ব্যবহার), ৩০৮ (চাঁদাবাজি), ৩১৮ (প্রতারণা), ৩১৯ (ছদ্মবেশে প্রতারণা), ৩৩৬ (জালিয়াতি), ৩৪০ (জাল নথি বা ইলেকট্রনিক রেকর্ড ব্যবহার) এবং ৩৫১ (অপরাধমূলক হুমকি) সহ তথ্য প্রযুক্তি আইনের উপযুক্ত ধারায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।' বর্তমানে পুলিশ অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে।