গণবিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা নেপালজুড়ে। জেন জি দের বিক্ষোভে টলে গিয়েছে সে দেশের সরকার। সরকার প্রতিরোধের চেষ্টা করলে বহু জনের মৃত্যু হয়। জখম হয়েছেন অন্তত ৫০০। উত্তাল পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। আরও একাধিক মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন বলে খবর। আগুন ধরানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী-সহ একাধিক মন্ত্রীর বাসভবনে। মন্ত্রী-প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের খুঁজে বের করে মারধর করছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এই আবহে নেপালের এক ছাত্রের জ্বালাময়ী ভাষণ ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ভিডিওতে দেখা গেছে, নেপালের হোলি বেল স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছে আবিস্কার রাউত। সে স্কুলের হেড বয় হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখে। রাউত তার ভাষণে হিমালয়ান রাষ্ট্র নেপালের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের কথা তুলে ধরে। ওই পড়ুয়া বলে, ‘আজ আমি এখানে দাঁড়িয়ে একটি নতুন নেপাল গড়ার স্বপ্ন নিয়ে কথা বলছি। আশা ও আবেগের আগুন আমার মধ্যে জ্বলছে। কিন্তু আমার হৃদয় ভারী। কারণ, এই স্বপ্ন যেন ধীরে ধীরে মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে।’ আবিস্কার রাউত জোর দিয়ে বলে, ‘আমি এখানে দাঁড়িয়ে আপনাদের চেতনায় আলো ফেলতে চাই, যাতে অন্ধকারের ঘনঘটাকে ভেদ করে নতুন এক ইতিহাস রচনা করা যায়।’ নেপালকে একজন মমতাময়ী মা হিসেবে উল্লেখ করে ওই পড়ুয়া প্রশ্ন তোলে, নাগরিকরা কি দেশকে তার প্রাপ্য সন্মান ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে? এরপরেই রাউত সহপাঠীদের রাজা বীরেন্দ্রের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেছিলেন, 'আমি মরে গেলেও, আমার দেশ কি বেঁচে থাকবে, এবং এই কথাগুলি তোমাদের মনে রাখো এবং ইতিহাসের পাতায় পরিবর্তনের স্মৃতিস্তম্ভ খোদাই করে রাখো।' ওই পড়ুয়ার এই বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই তার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে এটিকে ‘অসাধারণ ও সাহসী’ বলে অভিহিত করেছেন।
নেপালে জেন জি দের প্রতিবাদ
নেপালের গণবিক্ষোভের নেপথ্যে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম-সহ ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানোর কথা বলা হলেও বিক্ষোভকারীরা মূলত দেশব্যাপী দুর্নীতি ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন। এনিয়ে নেপালের সেনাপ্রধানের সঙ্গে মধ্যরাতে আলোচনায় বসেন সেদেশের বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের সমস্ত দাবি শোনেন সেনা প্রধান। বুধবার ফের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। সেই প্রস্তুতিও চলছে। নেপালের সেনাবাহিনীর তরফে ওই আলোচনা বৈঠকে মধ্যস্থতা করা হবে জানা গিয়েছে।এদিকে নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলির ইস্তফার পর বর্তমানে নেপালের দায়িত্বে এখন সেনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে তারা। নেপাল সরকারের প্রধান সচিবালয় ভবন নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী। দেশে লুটপাট চালালে, ভাঙচুর করলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে, এমনটাই জানিয়ে নেপালের সেনাবাহিনী। বুধবার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে সেনার তরফে বলা হয়েছে, এদিন বিকেল ৫টার পর থেকে দেশ জুড়ে কারফিউ জারি হবে। দেশে শান্তি ফেরাতে নাগরিকদেরও সহযোগিতা চেয়েছে সেনাবাহিনী।