১৭ বছর পর বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা হবে মহারাষ্ট্রের মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলার। মুম্বইয়ের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) বিশেষ আদালত ওই রায় দেবে। ২০০৮ সালে মহারাষ্ট্রের মালেগাঁও শহরে এক ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৬ জন নিহত হন। জখম হন শতাধিক। ঘটনার তদন্তে নেমে মহারাষ্ট্র পুলিশের সন্ত্রাসদমন শাখা বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞা এবং সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদ পুরোহিতকে মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করে। সাধ্বী প্রজ্ঞার নামে নথিভুক্ত মোটরবাইকই বিস্ফোরণে ব্যবহৃত হয়েছিল। প্রসাদ পুরোহিত তাঁকে সাহায্য করেছিলেন বলে অভিযোগ। দুই অভিযুক্তই অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরে ঘটনার তদন্তভার যায় এনআইএ-র কাছে। (আরও পড়ুন: বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ভারত-মার্কিন ষষ্ঠ দফার বৈঠক কবে? কেন চুক্তি করছেন না মোদী?)
আরও পড়ুন: ভারতের ওপর ২৫% শুল্ক চাপানোর পর ট্রাম্প নিলেন মোদীর নাম, উল্লেখ নয়া সময়সীমার
মালেগাঁও বিস্ফোরণ
২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৮। মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার মালেগাঁওয়ের সংখ্যালঘু প্রধান ভিকু চক। চেনা ব্যস্ততাকে ছিন্নভিন্ন করে প্রচণ্ড বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে মুম্বই থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরের মালেগাঁও। সেই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ৬ জন এবং আহত হন ১০০-র বেশি মানুষ। সেই সময় রমজান মাস চলছিল। মাঝে কেটে গিয়েছে ১৭ বছর। আজ, বৃহস্পতিবার সেই মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলার রায় ঘোষণা। চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল এই মামলার সওয়াল-জবাব শেষ হয়েছে। তারপর রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন বিশেষ বিচারক এ কে লাহোতি। আজ মুম্বইয়ের ওই বিশেষ আদালতে ভাগ্য নির্ধারণ হবে প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞার। অভিযুক্তদের তালিকায় নাম রয়েছে প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদ পুরোহিত, মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) রমেশ উপাদ্যায়, সুধাকর চতুর্বেদী, অজয় রাহিরকর ও সুধকর ধর দ্বিবেদীরও। (আরও পড়ুন: বন্ধুত্ব গেল তেল বেচতে, পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দিবাস্বপ্ন দেখছেন ট্রাম্প)
তদন্তে এটিএস
আদালত সূত্রে খবর, ২০০৮ সালে বিস্ফোরণের পর প্রথমে স্থানীয় থানায় মামলা দায়ের হয়। পরে তদন্তভার নেয় অ্যান্টি টেররিজম স্কোয়াড (এটিএস)। ২০০৩ সালে প্রজ্ঞা, পুরোহিত-সহ ১৬ জনের নামে চার্জশিট দায়ের হয়। তদন্তে জানা যায়, বিস্ফোরণের জন্য একটি এলএমএল ফ্রিডম মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়েছিল। সেটির ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর বদলে ফেলা হয়েছিল। ফরেন্সিক বিশ্লেষণে গাড়িটির প্রকৃত রেজিস্ট্রেশন নম্বর মেলে। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, গাড়িটি গুজরাটের। এবং প্রজ্ঞা সিং ঠাকুরের। ২০০৮ সালে ২৩ অক্টোবরে প্রাক্তন বিজেপি সাংসদকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে। এটিএস আদালতে জানায়, পুরোহিত কাশ্মীর থেকে আরডিএক্স কিনে মহারাষ্ট্রে নিজের বাড়িতে সেগুলি লুকিয়ে রেখেছিলেন। দেওলালি আর্মি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বোমা তৈরি করেন সুধাকর। অন্য তিন অভিযুক্ত মোটরসাইকেলটি ঘটনাস্থলে রেখে এসেছিল। সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা তৈরি করতেই সংখ্যালঘু প্রধান ওই স্থানে গাড়িটি রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ।
এনআইএ-র তদন্ত ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
২০১১ সালে এই মামলার তদন্তভার এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়া হয়, এবং তাদের তদন্তের পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ আনা হয়। এনআইএ-র ১,৫০০ পাতার রিপোর্টে বলা হয় যে, এই বিস্ফোরণের পিছনে ছিল একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশে নাশকতা সৃষ্টি করা। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সাধ্বী প্রজ্ঞা, কর্নেল পুরোহিত, অজয় রোহিরকর, মেজর রমেশ উপাধ্যায়, স্বামী দয়ানন্দ পাণ্ডে, সমীর কুলকার্নি এবং সুধাকর চতুর্বেদী। তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০ বি, ৩০২, ৩০৭, ৩২৪, ৩২৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগও।এনআইএ দাবি করেছে যে, এই সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে ‘অভিনব ভারত’ নামক একটি জঙ্গি সংগঠন জড়িত ছিল, যা দেশের ভেতরে নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। ২০১১ সালে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি যখন তদন্তে নামলো, তখন তারা আরো জোরালোভাবে এই সংগঠন ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে।
সাক্ষীর ভূমিকা
এই মামলায় প্রায় ২৯১ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের বক্তব্য, বিস্ফোরণের পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়নের পেছনে সরাসরি জড়িত ছিলেন এই সাত অভিযুক্ত। যদিও অভিযুক্তরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন এবং গোটা ঘটনাকে ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন, তবুও তদন্তকারীরা তাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।
রায় ঘোষণা
১৭ বছরের দীর্ঘ বিচারকাজের পর বৃহস্পতিবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পারে। মামলার সঙ্গে জড়িত তদন্তকারীরা আশা করছেন, এই রায়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা যাবে।মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলার চূড়ান্ত রায় আসন্ন। এই রায় শুধু একাধিক অভিযুক্তের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে না, বরং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দেশটির কঠোর অবস্থানকেও দৃঢ় করবে। সারা দেশে এই মামলার রায় নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে এবং দেশের জনগণ বিশেষভাবে অপেক্ষা করছে এই রায়টি কীভাবে আসবে, তা দেখতে।