লাদাখে গতকালের সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ ব্যাপক গ্রেফতারি অভিযান শুরু করেছে। বুধবারের সহিংসতায় জড়িত সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর। তারপর আজ লেহ-তে ভোরবেলা অভিযান ও তল্লাশির সময় প্রায় ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সহিংসতার জন্য কংগ্রেস কাউন্সিলর ফুন্টসোগ স্টানজিন সেপাগের বিরুদ্ধে একটি এফআইআরও দায়ের করেছে। তবে, সাম্প্রতিক অভিযানের সময় পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছে, তাদের মধ্যে লেহ হিল কাউন্সিলের কাউন্সিলরও আছেন কিনা তা স্পষ্ট নয়।
এর আগে লাদাখ হিংসা নিয়ে বুধবারই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি রিপোর্ট পেশ করেছে। সরকারের তরফ থেকে এই হিংসার জন্য দায়ী করা হয়েছে অ্যাক্টিভিস্ট সোনম ওয়াংচুককে। শাহের মন্ত্রকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, নিজের ভাষণে আরব বসন্তের ধাঁচের বিক্ষোভের উস্কানিমূলক উল্লেখ করেছিলেন সোনম। এছাড়াও নেপালে সাম্প্রতিক জেন জি বিক্ষোভের উল্লেখও করেছিলেন সোনম। এতে করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ উঠেছে পরিবেশকর্মী সোনমের বিরুদ্ধে। বুধবারের হিংসাত্মক এই ঘটনাগুলি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে রিপোর্টে।
উল্লেখ্য, বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে সেখানে। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাইয়ের নেতৃত্বাধীন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট ছিলেন না আন্দোলনকারীদের একাংশ। এই আবহে সোনম ওয়াংচুক গত ১০ সেপ্টেম্বর অনশন ধর্মঘট শুরু করেছিলেন। তিনি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটিকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অধীনে আনার দাবিও তুলেছেন। ভারত সরকার এই একই ইস্যুতে লেহ (এবিএল) এবং কার্গিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (কেডিএ)-এর সাথে সক্রিয়ভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। অক্টোবরে পরবর্তী বৈঠকও হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই গতকাল হিংসাত্মক আকার ধারণ করে এই আন্দোলন। তাতে প্রাণ হারান ৪ জন। ৩০ জন পুলিশকর্মী এবং সিআরপিএফ জওয়ান সহ জখম অন্তত ৭০ জন। এদিকে হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছাই হয়েছে লেহ-তে অবস্থিত বিজেপি পার্টি অফিস।
রিপোর্টে জানানো হয়, গতকাল সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ সোনমের অনশন ধর্মঘটের স্থান থেকে বিপুল সংখ্যক আন্দোলনকারী গিয়ে বিজেপির পার্টি অফিসে হামলা চালিয়েছিল। সোনমের এতে ইন্ধন ছিল। লেহ-র সরকারি প্রধানের অফিসেও হামলা চালানো হয়। তবে সকালের হিংসাত্মক ঘটনার পর থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই আছে। এদিকে কেন্দ্রের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, 'তাঁর উস্কানিমূলক বক্তব্যের জেরে এতকিছু হলেও সোনম ওয়াংচুক নিজে এর মাঝে অনশন ভেঙে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিজের গ্রামে ফিরে যান। তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কোনও চেষ্টাই করেননি।' এদিকে লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর কবিন্দর গুপ্তা এই ঘটনায় হিংসা ছড়ানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর জানিয়েছেন, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকে, সেটা বিনষ্ট করতেই হিংসার ছক তৈরি করা হয়েছে। প্রাণহানি রুখতে লেহতে আপাতত কার্ফু জারি করা হয়েছে।