মদ কেলেঙ্কারি মামলায় এবার ছত্তিগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের ছেলে চৈতন্য বাঘেলকে গ্রেফতার করল এসিবি/ ইওডব্লিউ। শুধু চৈতন্য নয়, এই মামলায় আরও একজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে গত ১৮ জুলাই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পুত্রকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। তারপর থেকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতেই ছিলেন চৈতন্য বাঘেল।
এসিবি/ ইওডব্লিউ আধিকারিকরা 'প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট' পাওয়ার পরেই চৈতন্যকে আদালতে হাজির করেন। এক বিবৃতিতে ওই সংস্থা জানিয়েছে, মদ কেলেঙ্কারি মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে চৈতন্য বাঘেল এবং আরেক অভিযুক্ত দীপেন চাওদাকে গ্রেফতার করা হয় এবং একটি বিশেষ আদালতে পেশ করা হয়েছিল। আদালত তাঁদের ৬ অক্টোবর পর্যন্ত এসিবি/ইওডব্লিউ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। গত জানুয়ারিতে দায়ের হওয়া মামলার ভিত্তিতে দুর্নীতির দিকগুলি তদন্ত করছে এসিবি/ইওডব্লিউ। ছত্তিশগড়ে ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ভূপেশ বাঘেলের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের আমলে ঘটে এই ‘লিকার স্ক্যাম।’ এই দুর্নীতির অভিযোগ এতে মদের অবৈধ বিক্রি হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের রাজস্বে কোন অর্থ আসেনি।অভিযোগ, বেআইনি মদ বিক্রির মাধ্যমে তৈরি হওয়া 'কমিশন' এবং রাজ্যের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক আধিকারিকদের নির্দেশ অনুসারে ২,৫০০ কোটি টাকারও বেশি অপরাধের অভিযোগের মূল সুবিধাভোগী ছিলেন বাঘেলের ছেলে।
এদিকে, চৈতন্যের আইনজীবী ফয়সাল রিজভী অভিযোগ করেছেন যে চাপ প্রয়োগের কৌশলের অংশ হিসেবে কোনও প্রমাণ ছাড়াই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, মূল চার্জশিট এবং এসিবি/ইওডব্লিউ-র দাখিল করা একাধিক সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে চৈতন্যের নাম উল্লেখ নেই। ওই চার্জশিটে প্রায় ৪৫ জনকে অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু তাদের মধ্যে ২৯ জনকে কখনও গ্রেফতার করা হয়নি। তাঁর কথায়, 'ছত্তিশগড় হাইকোর্ট চৈতন্যের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করার পর, তাঁকে এসিবি/ ইওডব্লিউ গ্রেফতার করে। ইওডব্লিউ বিশেষ আদালতে গ্রেফতারির ভিত্তিতে অন্যতম অভিযুক্ত লক্ষ্মী নারায়ণ বনসলের বয়ান পেশ করেছে। কিন্তু চৈতন্যের নাম কোনও চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়নি।'
আরও পড়ুন-২০২৬ সালের CBSE-র দশম-দ্বাদশের পরীক্ষা কবে? সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা বোর্ডের
এর আগে ইডি দাবি করেছিল যে, চৈতন্য বাঘেল এই স্ক্যামের পিছনে সিন্ডিকেটের প্রধান ছিলেন এবং ব্যক্তিগতভাবে প্রায় ১০০০ কোটি টাকার আত্মসাৎ করেছেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ইডি রায়পুরের এক বিশেষ আদালতে ৭০৩৯ পৃষ্ঠার সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দাখিল করে, যাতে চৈতন্যকে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা রাজনৈতিক বিতর্ককে নতুন মোড় দিয়েছে। যেখানে কংগ্রেস নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলির ‘দুর্ব্যবহার’ অভিযোগ তুলেছে। ইডির চার্জশিট অনুসারে, চৈতন্য বাঘেল ‘প্রসিডস অফ ক্রাইম’ এর ১৬.৭০ কোটি টাকা গ্রহণ করেছেন। এই টাকা তিনি তার রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ব্যবহার করে কালো টাকা সাদা করেছেন। এই অর্থ তার ‘ভিত্তল গ্রিন প্রজেক্ট’ এবং অন্যান্য রিয়েল এস্টেট প্রকল্পের উন্নয়নে ব্যয় করা হয়েছে। সংস্থার পরামর্শদাতা সৌরভ কুমার পান্ডে বলেছেন, 'চৈতন্য ১০০০ কোটিরও বেশি কালো টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি আনওয়ার ধেবর (রায়পুর মেয়র এবং কংগ্রেস নেতা আইজাজ ধেবরের ভাই) এবং অন্যদের সঙ্গে মিলে অর্থ তৎকালীন ছত্তিশগড় প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির কোষাধ্যক্ষ রাম গোপাল অগরওয়ালের কাছে পাঠিয়েছেন।' এছাড়া, চৈতন্যের নির্দেশে ৮০-১০০ কোটি টাকা কে.কে. শ্রীবাস্তবকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযুক্ত লক্ষ্মীনারায়ণ বনসল তার বক্তব্যে বলেছেন।
আরও পড়ুন-২০২৬ সালের CBSE-র দশম-দ্বাদশের পরীক্ষা কবে? সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা বোর্ডের
উল্লেখ্য, চৈতন্য বাঘেলকে ১৮ জুলাই ২০২৫ তার ৩৮তম জন্মদিনে দুর্গ জেলার ভিলাইয়ের তার বাড়িতে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ২২ জুলাই তাকে ১৪ দিনের জুডিশিয়াল কাস্টডিতে পাঠানো হয়। ইডির তদন্তে একটি হার্ড ডিস্ক থেকে ডিজিটাল প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা চার্জশিটের সঙ্গে জমা দেওয়া হয়েছে।সংস্থা আরও বলেছে, এই অর্থের শেষ ব্যবহার এখনও তদন্তাধীন, এবং বাঘেল পরিবারের কাছের সহযোগীদের কাছে অর্থ হস্তান্তর করা হয়েছে। রাজ্যের এক্সাইজ বিভাগের কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীদের এই সিন্ডিকেট ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সক্রিয় ছিল।