'ভারত শীঘ্রই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে।' লোকসভায় দাঁড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের 'মৃত অর্থনীতি' মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিলেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল।একদিন আগেই ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর ঘোষণা করেছেন। নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন চালিয়ে যাওয়ার জন্য জরিমানা বা পেনাল্টির ঘোষণাও করেছেন তিনি। এবার ভারত ও রাশিয়াকে নিয়ে তীক্ষ্ণ মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জানিয়েছেন, রাশিয়া এবং ভারতের ব্যাপারে ভাবতেই চান না তিনি। মৃত অর্থনীতি নিয়ে ডুবে যেকে পারে দুই দেশই। তারপর থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে শুরু হয়েছে চাপানউতোর।
এই আবহে বৃহস্পতিবার লোকসভায় কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেন, 'ভারতীয় পণ্যের উপর বর্ধিত শুল্ক নিয়ে সরকার বিবেচনা করে দেখছে। জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সমস্ত পদক্ষেপ করা হবে।' সংসদে মন্ত্রী বলেন, গত ২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট একটি প্রশাসনিক নির্দেশে বর্ধিত শুল্কের কথা ঘোষণা করেছিলেন। ৫ এপ্রিল থেকে ১০ শতাংশ ন্যূনতম শুল্ক চাপে। সব মিলিয়ে ভারতের জন্য ২৬ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্কের বোঝা চাপানো হয়।এরপর ১০ এপ্রিল প্রাথমিকভাবে শুল্ক হারের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় প্রথমে ৯০ দিন ও তারপর বাড়িয়ে করা হয় ১ অগস্ট পর্যন্ত। ট্রাম্পের সদ্য ঘোষণা শুল্কহার নিয়ে সরকার বিবেচনা করে দেখছে। বাণিজ্য ক্ষেত্রে এর প্রভাবকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
আরও পড়ুন-২৫% শুল্ক আরোপ অযৌক্তিক! ট্রাম্পকে পাল্টা দিয়ে বিস্ফোরক শশী-ওয়েইসি
তিনি আরও বলেন, ভারত গত ১০ বছরে একাদশতম স্থান থেকে পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে উঠে এসেছে। এর কৃতিত্ব কৃষক ও এমএসএমই সংস্থাগুলির। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে রফা-মীমাংসার চেষ্টা করা হলেও ভারত আগে নিজের স্বার্থ বজায় রাখবে। তাঁর কথায়, 'বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক সকল রপ্তানিকারক, অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করছে। সরকার কৃষক, শ্রমিক, উদ্যোক্তা, শিল্পপতি, রপ্তানিকারক, এমএসএমই এবং শিল্প খাতের অংশীদারদের স্বার্থ রক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়।' গোয়েল এদিন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, ভারতের আর্থিক পরিস্থিতি ক্ষতিগ্রস্ত যাতে না হয় সেদিকে নজর রেখেছে কেন্দ্র। দেশের কৃষক সমাজ থেকে শুরু করে বাকিরা যাতে এই শুল্ক নীতির গেরোতে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। ফলে দেশের কৃষকদের বিষয়টি নিয়ে ভাবার দরকার নেই। সরকার সেখানে দেশের কৃষকদের স্বার্থের দিকটি সবার আগে দেখবে কেন্দ্রীয় সরকার।
লোকসভাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন এ বিষয়ে ইতিমধ্যে দুই দেশের মধ্যে চারদফা আলোচনা হয়েছে। যেহেতু দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করা হয়েছে তাই এই বিষয়টি নিয়ে ভারত কথা বলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। ভারত যাতে নিজের স্বার্থ রেখে কাজ করতে পারে সেদিকে জোর দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সমস্ত ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।পাশাপাশি গোয়েলের কথায় আত্মবিশ্বাস ধরা পড়ে। ভারত নিজের আর্থিক পরিস্থিতি জোরদার করেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে সেকথা তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, 'কেন্দ্রীয় সরকারের পরবর্তী টার্গেট ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। সেদিক থেকে দেখতে হলে যা কিছু করার সরকার সেটা করবে। এটি করতে গেলে সবধরণের সংস্কার করা হবে।'
আরও পড়ুন-২৫% শুল্ক আরোপ অযৌক্তিক! ট্রাম্পকে পাল্টা দিয়ে বিস্ফোরক শশী-ওয়েইসি
উল্লেখ্য, মার্কিন শুল্কনীতিতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কে বড়সড় ধাক্কা লেগে গেল। বুধবারই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ভারতের উপরে একতরফা ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক চাপাবে ওয়াশিংটন। ১ অগস্ট থেকে তা কার্যকর হবে। এই শুল্কের বোঝার সঙ্গে থাকছে এক অনির্দিষ্ট পেনাল্টি-রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার খেসারত দিতে হবে নয়া দিল্লিকে। ফলে শুধু রফতানি নয়, কূটনৈতিক সম্পর্কেও অস্বস্তি বাড়ল ভারতের।