দিল্লির স্বঘোষিত গডম্যান স্বামী চৈতন্যনন্দ সরস্বতী। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ যেন শেষই হচ্ছে না। দিল্লির বসন্ত কুঞ্জে শ্রী সারদা ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্টের ছাত্রীদের উপর দীর্ঘদিন ধরে যৌন হেনস্থা চালানোর অভিযোগ উঠেছে চৈতন্যানন্দ সরস্বতীর বিরুদ্ধে। একাধিক ছাত্রীর বয়ান সামনে আসার পরেই নড়েচড়ে বসেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজের ভার্চুয়াল ইন্টারঅ্যাকশনের সময় এবং পুলিশের কাছে এফআইআরে একাধিক ছাত্রী জানিয়েছেন, কীভাবে চৈতন্যানন্দ তাঁদের উপরে শারীরিক ও মানসিক চাপ তৈরি করতেন।
এফআইআরের তথ্য অনুযায়ী, স্বামী চৈতন্যনন্দ সরস্বতী ওরফে পার্থসারথী ছাত্রীদের গভীর রাতে তার ঘরে যেতে বাধ্য করতেন, এমনকী বিদেশ সফরেও তাঁর সঙ্গ দিতে চাপ দিতেন।।পার্থসারথী বসন্ত কুঞ্জের শ্রী শারদা ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্ট-এর পরিচালক। এই প্রতিষ্ঠানটি কর্ণাটকের শৃঙ্গেরীর শ্রী শ্রী জগদগুরু শঙ্করাচার্য মহাসংস্থানম দক্ষিণাম্নায় শ্রী শারদা পীঠম-এর অধীনে চলে, তবে সংস্থাটি জানিয়েছে তারা অভিযুক্তের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। অভিযোগ, নিজের ফোনের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের হস্টেলের সিসিটিভির সংযোগ করে রেখেছিলেন অভিযুক্ত। শুধু তাই নয়, মহিলাদের ঘরে লুকিয়ে রাখতেন ক্যামেরা। বাথরুমের বাইরেও নাকি লাগানো ছিল ক্যামেরা। এছাড়াও রাতের বেলা তাঁর কোয়ার্টারে যেতে ছাত্রীরা বাধ্য হতেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের ডিগ্রি আটকে দেওয়ার বা সাসপেন্ড করার হুমকি দেওয়া হত। এমনকি এক ছাত্রীকে নিজের নাম পর্যন্ত পাল্টাতে বাধ্য করেছিলেন বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন-রামলীলায় নিষেধাজ্ঞা! এলাহাবাদ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করল সুপ্রিম কোর্ট
২১ বছরের এক ছাত্রী জানিয়েছেন, গত বছর প্রথম তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় চৈতন্যানন্দের। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর অশ্লীল চ্যাট। মাঝরাতে মেসেজ আসত, 'বেবি, আই লাভ ইউ… তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।' উত্তর না দিলে জোর করে চৈতন্যানন্দ রিপ্লাই করাতেন বলেও অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রী। আরেক ছাত্রী জানিয়েছেন, 'একবার স্বামী চৈতন্যনন্দ সরস্বতী সরাসরি প্রশ্ন করেছিলেন যে আমি কী প্রেমিকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছি। আমি কী কন্ডোম ব্যবহার করেছি।' এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সর্বেসর্বা স্বামী চৈতন্যানন্দের বিরুদ্ধে কেউই কথা বলার সাহস দেখাতেন না। যেই কারণে তিনি নিজের মর্জিমতো যা খুশি করতেন। রাতবিরেতে ছাত্রীদের ঘরে ডেকে পাঠানো, জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা, অশালীন ভাষায় আপত্তিকর মেসেজ পাঠানো, জবাব না দিলে বারবার বিরক্ত করা, ছাত্রীদের রূপ-চুল নিয়ে উক্তি করা-দিল্লির 'বাবা'- র বিরুদ্ধে আর কত অভিযোগ যে প্রকাশ্যে আসছে, তা স্পষ্ট নয় এখনও।পুলিশের তদন্তে আরও উঠে এসেছে, ২০০৯ এবং ২০১৬ সালেও দু’টি যৌন নির্যাতনের মামলা হয়েছিল স্বামী চৈতন্যানন্দ-এর বিরুদ্ধে। কিন্তু সেগুলি থেকে অব্যাহতি পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এরপরে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল।
আরও পড়ুন-রামলীলায় নিষেধাজ্ঞা! এলাহাবাদ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করল সুপ্রিম কোর্ট
এফআইআরে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ইনস্টিটিউটের তিনজন মহিলা কর্মী, যার মধ্যে একজন সহযোগী ডিনও রয়েছেন, ছাত্রীদের উপর চাপ সৃষ্টি করতেন যাতে তাঁরা সরস্বতীর ইচ্ছায় সম্মতি দেন এবং অভিযোগ দায়ের না করেন। ইনস্টিটিউটের অধিকাংশ ছাত্রীই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণি থেকে আসেন বা প্রতিরক্ষা কর্মীদের সন্তান। এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, ইনস্টিটিউটের বেসমেন্ট থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি ভলভো গাড়ি, যার উপর জাল কূটনৈতিক নম্বরপ্লেট লাগানো ছিল। এই গাড়িটি সরস্বতীরই এবং এর জন্য আলাদা মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ দুটি মামলা করেছে, একটি যৌন হয়রানির অভিযোগে এবং আরেকটি জাল নম্বরপ্লেট ব্যবহারের জন্য। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-এর ৭৫(২), ৭৯ এবং ৩৫১(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।