রাজ্যের মর্যাদা এবং ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে লাদাখে সহিংসতা ছড়ায় সম্প্রতি। এই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা। তিনি বলেন, লাদাখ একটি সীমান্তবর্তী রাজ্য। নেহরুর সময় থেকেই চিন এই অঞ্চলকে তাদের জমি বলে দাবি করে আসছে। বর্তমানে যে আন্দোলন চলছে, তা থেকে স্পষ্ট যে সেখানকার মানুষের মনে অসন্তোষ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের আকাঙ্ক্ষা বুঝে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করা। এটি একটি স্পর্শকাতর এলাকা। কেন্দ্রের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া।'
এদিকে ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা সোনম ওয়াংচুককে সমর্থন করে বলেন, সহিংস আন্দোলনের সঙ্গে ওয়াংচুকের কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি একজন গান্ধীবাদী আন্দোলনকারী। এখন লাদাখের মানুষ তাঁর গান্ধীবাদী কাজে বিরক্ত। এ কারণেই এই সহিংসতা হয়েছে। ইটি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আবদুল্লা বলেন, 'চিন ঘাপটি মেরে বসে আছে। সারা বিশ্ব জানে চিনের দখলে আমাদের জমি আছে। আর কতদিন আমরা দুনিয়ার কাছে মিথ্যা কথা বলব? এটি একটি স্পর্শকাতর এলাকা। কেন্দ্রীয় সরকার যদি এখানে শক্তি প্রয়োগ করে, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে ওয়াংচুকের গান্ধীবাদী আন্দোলনকে সমর্থন করছিল মানুষ। তবে এখন লাদাখের মানুষের ধৈর্য এখন ভেঙে গেছে।'
উল্লেখ্য, বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে সেখানে। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাইয়ের নেতৃত্বাধীন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট ছিলেন না আন্দোলনকারীদের একাংশ। এই আবহে সোনম ওয়াংচুক গত ১০ সেপ্টেম্বর অনশন ধর্মঘট শুরু করেছিলেন। তিনি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটিকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অধীনে আনার দাবিও তুলেছেন। ভারত সরকার এই একই ইস্যুতে লেহ (এবিএল) এবং কার্গিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (কেডিএ)-এর সাথে সক্রিয়ভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। অক্টোবরে পরবর্তী বৈঠকও হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই ২৪ সেপ্টেম্বর হিংসাত্মক আকার ধারণ করে এই আন্দোলন। তাতে প্রাণ হারান ৪ জন। ৩০ জন পুলিশকর্মী এবং সিআরপিএফ জওয়ান সহ জখম অন্তত ৭০ জন। এদিকে হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছাই হয়েছে লেহ-তে অবস্থিত বিজেপি পার্টি অফিস।
রিপোর্টে জানানো হয়, গত ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ সোনমের অনশন ধর্মঘটের স্থান থেকে বিপুল সংখ্যক আন্দোলনকারী গিয়ে বিজেপির পার্টি অফিসে হামলা চালিয়েছিল। সোনমের এতে ইন্ধন ছিল। লেহ-র সরকারি প্রধানের অফিসেও হামলা চালানো হয়। তবে সকালের হিংসাত্মক ঘটনার পর থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই আছে। এদিকে কেন্দ্রের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, 'তাঁর উস্কানিমূলক বক্তব্যের জেরে এতকিছু হলেও সোনম ওয়াংচুক নিজে এর মাঝে অনশন ভেঙে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিজের গ্রামে ফিরে যান। তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কোনও চেষ্টাই করেননি।' এদিকে লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর কবিন্দর গুপ্তা এই ঘটনায় হিংসা ছড়ানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর জানিয়েছেন, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকে, সেটা বিনষ্ট করতেই হিংসার ছক তৈরি করা হয়েছে। প্রাণহানি রুখতে লেহতে আপাতত কার্ফু জারি করা হয়েছে।