হাতে আর মাত্র মেরেকেট ক’টা মাস। তার আগেই বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি ত্বরান্বিত করতে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং তামিলনাড়ুর নির্বাচনী ইন-চার্জদের নাম ঘোষণা করল বিজেপি। যদিও বিহার নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ এখনও প্রকাশ করা হয়নি, কিন্তু গেরুয়া শিবিরের নতুন পদক্ষেপে স্পষ্ট যে রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয়ভাবে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে।
বিহার
বিহার বিধাসভা নির্বাচনের জন্য বিজেপির প্রধান ইন-চার্জ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। একই সঙ্গে সহকারি ইন-চার্জ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী সি.আর. পাটিল এবং উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিহারের মতো নির্বাচনীভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে দল নতুন কৌশল ও নেতৃত্ব দিয়ে ভোটারদের মন জিততে চাইছে। সূত্রের খবর, আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এনডিএ-র আসন ভাগাভাগি নিয়ে প্রায় চূড়ান্ত ঐকমত্যে পৌঁছেছে বিজেপি ও জনতা দল (ইউনাইটেড)। বিজেপি ও মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জেডিইউ আসন বণ্টনের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে এবং খুব শীঘ্রই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হতে চলেছে।জানা যাচ্ছে, আসন্ন নির্বাচনে জেডিইউ ১০২টি আসনে এবং বিজেপি ১০১টি আসনে প্রার্থী দিতে পারে। এই সংখ্যার পেছনে নীতীশ কুমারের স্পষ্ট দাবি কাজ করেছে-'বিজেপির চেয়ে অন্তত একটি আসন বেশি চাই।' অন্যদিকে, চিরাগ পাসওয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি (রাম বিলাস) সম্ভবত ২০টি আসনে লড়াই করবে বলে সূত্রের দাবি।
পশ্চিমবঙ্গ
ছাব্বিশের পশ্চিমবঙ্গের বিধাসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রধান ইন-চার্জ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব। সহকারী করা হয়েছে ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবকে। বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অরুন সিং।পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত অত্যন্ত জটিল। বিজেপি এখানে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। নতুন ইন-চার্জরা মূলত নির্বাচনী প্রস্তুতি, জনসংযোগ ও কৌশল প্রণয়নে মনোনিবেশ করবেন। বস্তুত, কয়েক মাস আগেই বদলে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি। নতুন দায়িত্বে এসেছেন শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর কাঁধে ভর করেই নতুন উদ্যোমে ছুটছে দল। এদিকে, কিছুদিন আগেই আবার আরএসএস-বিজেপি সমণ্বয় বৈঠকও হয়ে গিয়েছে। তবে, বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের টিমে কারা ঠাঁই পাবেন, দায়িত্ব দেওয়া হবে কাদের উপর, তা নিয়ে এখন বঙ্গ বিজেপির অন্দরে বিস্তর কাটাছেঁড়া চলছে বলে সূত্রের খবর। জানা যাচ্ছে, দিন কয়েক আগের সেই বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নাম উঠে এসেছে রীতেশ তিওয়ারি, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, সঞ্জয় সিং, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, প্রবাল রাহা, লকেট চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোদের। তাঁদের মধ্যে থেকে চারজন সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন। বর্তমানে এই নিয়েই তুঙ্গে চর্চা।
তামিলনাড়ু
আগামী বছর বাংলার সঙ্গে সঙ্গে তামিলনাড়ুতেও বিধানসভা নির্বাচন। দক্ষিণের এ রাজ্যে জয়ললিতার এআইএডিএমকে এখন দুর্বল। এআইএডিএমকের স্থান দখল করে ডিএমকের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে আসতে মরিয়া বিজেপি। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। তামিলনাড়ু নির্বাচনের দায়িত্বে থাকছেন লোকসভার সাংসদ বৈজয়ন্ত পান্ডা। সেই সঙ্গে সহকারি ইন-চার্জ হিসেবে মনোনীত হয়েছেন মুরলিধর মোহল। এবার তামিলনাড়ুতে হিন্দি বিরোধী ভাষা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন ডিএমকে প্রধান তথা মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। স্বাভাবিকভাবেই এটাই হবে আগামী বছরের ভোটের ইস্যু। ভোটের আগে তামিল সত্ত্বা ও ভাষার আবেগ নিয়ে ডিএমকে মাঠে নামায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে বিজেপি। তাই বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অত্যন্ত সতর্ক রয়েছে। তারা গোটা বিষয়টি নিয়ে সাবধানতার সঙ্গে এগোতে চাইছে। কোনওরকম বেফাঁস মন্তব্য যেন কেউ না করে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বিজেপির তরফে।
রাজ্য পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিহার, তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনে বিজেপি শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করতে চায়। দলের অভিজ্ঞ নেতা এবং সহকারি ইন-চার্জরা ভোটারদের কাছে পৌঁছানো, নির্বাচনী প্রচারণা চালানো এবং সাংগঠনিক কাজ তদারকি করার জন্য মাঠে কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন।এই পদক্ষেপই প্রমাণ করে যে বিজেপি আগামী নির্বাচনে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত। রাজ্য নির্বাচনের ফলাফল কেন্দ্রের রাজনৈতিক অবস্থান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই দল এখন থেকেই কৌশল, নেতৃত্ব এবং নির্বাচনী প্রস্তুতি শক্তিশালী করতে তৎপর।