কোনও মেয়ের হিন্দু মতে বিয়ে হয়ে গেলে, হিন্দু আইনানুসারে গোত্রও পরিবর্তন হয়ে যায়। একটি উত্তরাধিকার সংক্রান্ত মামলায় মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে উল্লিখিত ধারাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আনা একটি আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালত বলেছে, কোনও স্বামীহারা নিঃসন্তান মহিলার মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারেন স্বামীর পরিবারের কেউ। মহিলার বাপেরবাড়ির কেউ সেই সম্পত্তির ভাগ পাবেন না। কারণ, বিয়ের সময়েই কোনও মহিলার গোত্রও পরিবর্তিত হয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের একমাত্র মহিলা বিচারপতি বিভি নাগরত্ন বলেন, হিন্দু সমাজে ‘কন্যাদান’ নামে একটি প্রথা চালু আছে। যাতে কোনও মেয়েকে যখন তাঁর বাবা বা বাড়ির কোনও আত্মীয় স্বামীর হাতে সমর্পণ করে দেন, তখন তাঁর গোত্রও পরিবর্তিত হয়। গোত্র হল সাধারণ উত্তরাধিকার পরিচয়, বংশ মর্যাদা। তিনি আরও বলেন, সমাজে হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা প্রথাকে ভাঙার কোনও ইচ্ছা আদালতের নেই।এই রায়ের পেছনে একাধিক সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলা প্রভাব ফেলেছে। শীর্ষ আদালতের কাছে ভূরিভূরি আবেদন এসেছে যে, নিঃসন্তান হিন্দু স্বামীহারা মহিলার সম্পত্তির ওয়ারিশ কে হবেন। যদি তিনি উইল না করে যান তাহলে তাঁর সম্পত্তির ভোগদখল স্বামী না বাপেরবাড়ির উত্তরাধিকারী পাবেন? বর্তমান আইনে মেয়ের উইল না থাকলে তাঁর সম্পত্তি স্বামীর পরিবারের হাতে যায়, বাপেরবাড়ির নয়।
আরও পড়ুন-১০০০ কোটির জালিয়াতি! মদ কেলেঙ্কারি মামলায় ফের গ্রেফতার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পুত্র
আদালতে এরকমই একটি আর্জি এসেছে যেখানে কোভিডকালে এক অল্পবয়সি দম্পতির মৃত্যু হয়।তারপর থেকেই দু'জনের সম্পত্তি চেয়ে ছেলে এবং মেয়েটির মা আর্জি জানান আদালতে। একদিকে, ছেলেটির মা দাবি করেন যে ওই দম্পতির সম্পূর্ণ সম্পত্তিতে তার অধিকার রয়েছে, অন্যদিকে মেয়েটির মা তার কন্যার সঞ্চিত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে চান। আরও একটি মামলায় নিঃসন্তান এক দম্পতির মৃত্যুর পর লোকটির বোন তাঁদের সম্পত্তির দাবি করেন। আইনজীবী শীর্ষ আদালতে বলেন, এটা একটি জনস্বার্থ সমস্যা তাই সুপ্রিম কোর্টের উচিত পদক্ষেপ করা। যার জেরে বিচারপতি বিভি নাগরত্ন ও আর মাধবনের বেঞ্চের কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়েন আইনজীবী। বিচারপতি নাগরত্ন কন্যাদান ও গোত্রদানের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, যখন কোনও মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় হিন্দু শাস্ত্র মতে ওই মেয়ের দায়িত্ব সম্পূর্ণত স্বামী ও তাঁর পরিবারের হাতে সমর্পণ করে দেন পিতা। তিনি আরও বলেন, কোনও মেয়ে বিয়ের পর তাঁর দাদা বা ভাইয়ের কাছে খোরপোষের আর্জি জানাতে পারেন না। বিয়ের প্রথা অনুসারে বিশেষত দক্ষিণ ভারতে বিয়ের সময় মেয়ের গোত্র বদলে যায়। ফলে তাঁর উইল ছাড়া সেই সম্পত্তি শ্বশুরবাড়ির ভাগেই যাবে। তবে বিচারপতি জানান, স্বামীর পরিবার ছাড়া অন্য কাউকে সম্পত্তি দিতে চাইলে কোনও মহিলা উইল করে যেতেই পারেন।
আরও পড়ুন-১০০০ কোটির জালিয়াতি! মদ কেলেঙ্কারি মামলায় ফের গ্রেফতার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পুত্র
১৯৫৬ সালের হিন্দু উত্তরাধিকারী আইন অনুযায়ী, কোনও হিন্দু মহিলা যদি স্বামী-সন্তানহীন অবস্থায় মারা যান। এবং তাঁর কোনও উইল বা ইচ্ছাপত্র না থাকে, তাহলে তাঁর সম্পত্তি চলে যায় স্বামীর উত্তরাধিকারীদের কাছে।