দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লির বসন্ত কুঞ্জ এলাকার একটি প্রাইভেট ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের 'চেয়ারম্যান' এবং স্বঘোষিত গডম্যান স্বামী চৈতন্যনন্দ সরস্বতীর বিরুদ্ধে ১৭ জনের বেশি ছাত্রীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছে কর্ণাটকের শৃঙ্গেরি মঠের শ্রী সারদা ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্ট।এবার এই ঘটনায় প্রকাশ্যে এল বিস্ফোরক তথ্য। জানা গেছে, এক প্রাক্তন ছাত্রীর অভিযোগপত্র এবং ভারতীয় বায়ুসেনার এক আধিকারিকের ইমেলের জেরেই সামনে এসেছে দিল্লির নামী ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের ভিতরে ঘটে যাওয়া যৌন হেনস্থার তথ্য।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, গত আগস্ট মাসে শ্রী শারদা ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্টের ছাত্রীরা অভিযোগ দায়ের করার পরই স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী ওরফে ডঃ পার্থসারথির বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত করা হয়। সূত্রের খবর, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অতীতে অনুরূপ অভিযোগ থাকলেও তাঁকে কখনও গ্রেফতার করা হয়নি। ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ (দক্ষিণ-পশ্চিম) অমিত গোয়েল বলেন, গত ৪ আগস্ট কলেজ প্রশাসনের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নথিভুক্ত করা হয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত মূলত আর্থিকভাবে দুর্বল বৃত্তি প্রাপ্ত ছাত্রীদের টার্গেট করতেন।দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরের শুরুর দিকে স্নাতক হওয়া এক প্রাক্তন ছাত্রীর ২৮ জুলাই পাঠানো চিঠির মাধ্যমে প্রথম অভিযোগটি প্রশাসনের নজরে আসে।প্রায় একই সময়ে একজন ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন ইমেলের মাধ্যমে জানান, ছাত্রীদের কাছ থেকে যৌন হেনস্থার বিস্তারিত অভিযোগ প্রাপ্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন-১০০০ কোটির জালিয়াতি! মদ কেলেঙ্কারি মামলায় ফের গ্রেফতার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পুত্র
ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন ইমেলে জানান, চৈতন্যানন্দ রাতের অস্বাভাবিক সময়ে ছাত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠাতেন, অপমানজনক ভাষা ব্যবহার করতেন এবং একাধিক ছাত্রীকে যৌন সম্পর্কে জড়াতে চাপ দিতেন। এই অভিযোগগুলির পরিপ্রেক্ষিতে ৩ আগস্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালন পর্ষদ প্রায় ৩০ জন ছাত্রীকে নিয়ে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে বহু ছাত্রী অভিযোগ করেন যে সরস্বতী শুধু অশ্লীল বার্তা পাঠাতেন না, বরং তাঁদের উপর শারীরিক চাপও সৃষ্টি করতেন।এফআইআরে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ইনস্টিটিউটের তিনজন মহিলা কর্মী, যার মধ্যে একজন সহযোগী ডিনও রয়েছেন, ছাত্রীদের উপর চাপ সৃষ্টি করতেন যাতে তাঁরা সরস্বতীর ইচ্ছায় সম্মতি দেন এবং অভিযোগ দায়ের না করেন। ইনস্টিটিউটের অধিকাংশ ছাত্রীই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণি থেকে আসেন বা প্রতিরক্ষা কর্মীদের সন্তান। এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, ইনস্টিটিউটের বেসমেন্ট থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি ভলভো গাড়ি, যার উপর জাল কূটনৈতিক নম্বরপ্লেট লাগানো ছিল। এই গাড়িটি সরস্বতীরই এবং এর জন্য আলাদা মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ দুটি মামলা করেছে, একটি যৌন হয়রানির অভিযোগে এবং আরেকটি জাল নম্বরপ্লেট ব্যবহারের জন্য। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-এর ৭৫(২), ৭৯ এবং ৩৫১(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অন্যদিকে, চৈতন্যানন্দ নিজেকে একজন 'খ্যাতনামা অধ্যাপক, লেখক, বক্তা এবং আধ্যাত্মিক দার্শনিক' বলে দাবি করেন এবং তাঁর লেখা ২৮টি বই রয়েছে। তবে বর্তমানে তিনি পলাতক। পুলিশ তাঁর খোঁজে একাধিক রাজ্যে অভিযান চালাচ্ছে। তবে এটি সরস্বতীর বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ নয়। ২০০৯ সালে ডিফেন্স কলোনি থানায় এবং ২০১৬ সালে বসন্ত কুঞ্জ থানায় তাঁর বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও যৌন হেনস্থার মামলা হয়েছিল, কিন্তু তিনি কখনও গ্রেফতার হননি। এই মামলার তদন্তে ৩২ জন ছাত্রীর সাক্ষ্য রেকর্ড করা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে ১৭ জন সরাসরি অভিযোগ করেছেন যে চৈতন্যানন্দ তাঁদের অশ্লীল বার্তা পাঠিয়েছেন, অপমানজনক ভাষা ব্যবহার করেছেন এবং শারীরিকভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁদের বয়ান ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।