দিল্লিতে ফের স্বঘোষিত ধর্মগুরুর কেলেঙ্কারি। বসন্ত কুঞ্জের শ্রী শারদা ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্টের স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী ওরফে পার্থ সারথির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার গুরুতর অভিযোগে তোলপাড় রাজধানী। ইডব্লিউএস স্কলারশিপে পিজিডিএম কোর্সে পড়া ১৭ জন ছাত্রী ওই স্বঘোষিত ধর্মগুরুরর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি এবং অশ্লীল আচরণের অভিযোগ এনেছেন। এই গুরুতর অভিযোগ সামনে আসার পর থেকেই পলাতক অভিযুক্ত।
গত ৪ আগস্ট দিল্লির বসন্ত কুঞ্জ থানায় পার্থ সারথী তথা চৈতন্যনন্দ সরস্বতীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। আর সেখানেই অভিযোগ ওঠে, চৈতন্যনন্দ সরস্বতী পরপর ১৭ জন তরুণীকে হেনস্থা করেছেন। দিল্লি পুলিশ ৩২ জন ছাত্রীর বক্তব্য রেকর্ড করেছে, যাদের মধ্যে ১৭ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আপত্তিজনক ভাষা, অশ্লীল হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেক্সট বার্তা পাঠানো এবং অবাঞ্ছিত শারীরিক স্পর্শের অভিযোগ এনেছেন। অভিযোগকারী ছাত্রীরা আরও জানিয়েছেন, অভিযুক্ত তাদের ব্ল্যাকমেইল ও হুমকি দিত। এছাড়া আশ্রমের তিন মহিলা কর্মী ও প্রশাসক তাঁকে এই কাজে সহায়তা করত বলেও অভিযোগ। পুলিশ ওই তিন তরুণীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে। অন্যদিকে, এই ঘটনা সামনে আসার পরই আশ্রমের পরিচালন পর্ষদ শ্রী শৃঙ্গেরি মঠ দ্রুত পদক্ষেপ করে এবং স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতীকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এক বিবৃতিতে মঠ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, 'স্বামী চৈতন্যনন্দ সরস্বতী, যিনি পূর্বে স্বামী পার্থসারথি নামে পরিচিত ছিলেন, অবৈধ ও অনুপযুক্ত কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন। পীঠ তার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। একই সঙ্গে স্বামী চৈতন্যনন্দ সরস্বতী কর্তৃক সংঘটিত অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রথম নয়, অভিযুক্ত স্বামী চৈতন্যনন্দ সরস্বতীর বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক অভিযোগ উঠেছে। ২০০৯ সালে ডিফেন্স কলোনিতে তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও শ্লীলতাহানির মামলা হয়েছিল। ২০১৬ সালে বসন্ত কুঞ্জেরই এক মহিলা তাঁর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওড়িশার বাসিন্দা স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী গত ১২ বছর ধরে আশ্রমে তত্ত্বাবধায়ক এবং পরিচালক হিসেবে কাজ করছিলেন। তার শেষ অবস্থান আগ্রায় ট্র্যাক করা গেলেও, তিনি ক্রমাগত স্থান পরিবর্তন করছেন এবং খুব কমই মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে এবং বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে। তদন্ত চলাকালীন আশ্রমের বেসমেন্টে একটি ভলভো গাড়ি পাওয়া গিয়েছে, যার গায়ে একটি ভুয়ো রাষ্ট্রসংঘের নম্বর প্লেট লাগানো রয়েছে। পুলিশ গাড়িটি উদ্ধার করে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে। এই কূটনৈতিক নম্বর প্লেটটি কীভাবে সে জোগাড় করল, সে বিষয়েও তদন্ত চলছে।