ফের একবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ পাক সেনা প্রধান আসিম মুনিরের। অবশ্য শুধু মুনির নয়, এবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফও। দুই নেতার মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে তা অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার কিছুটা আগে হোয়াইট হাউসে পৌঁছেছিলেন। পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলটি সন্ধ্যা ৬টা ১৮ মিনিটে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেন। মার্কিন তরফ থেকে এই বৈঠকের কোনও ছবি প্রকাশ করা হয়নি। যেকটি ছবি সামনে এসেছে, তা পাকিস্তানি সাংবাদিকরা প্রকাশ করেছেন।
শরিফ ও ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠকটি ব্যক্তিগতভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে কোনও মিডিয়াকে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। হোয়াইট হাউস সফরের সময় শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। বর্তমান পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউসে এই বৈঠকটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষত জুলাইয়ে দুই দেশের বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণার পরে এই প্রথম শেহবাজ শরিফের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সাক্ষাৎ করেন ট্রাম্প। সম্প্রতি আরব মুসলিম দেশগুলির সম্মেলনে অনানুষ্ঠিক ভাবে দেখা হয়েছিল ট্রাম্প এবং শেহবাজের। এর আগে বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণার সময় ট্রাম্প বলেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে মজুদ তেলের ভাণ্ডার উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করতে চলেছে। তখন তিনি বড় গলায় বলেছিলেন, 'ভবিষ্যতে পাকিস্তানের থেকে তেল কিনবে ভারত।' উল্লেখ্য, সেই সময় আবার ভারত-পাক সংঘাত থামানোর কৃতিত্ব দাবি করে দিল্লির সঙ্গে দূরত্বও তৈরি করেছিলেন ট্রাম্প।
এদিকে ট্রাম্পের সেই 'বিশাল চুক্তি' নিয়ে সম্প্রতি মার্কিন জ্বালানি সচিব ক্রিস রাইটকে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। জবাবে রাইট জানিয়ে দেন, তাঁর কাছে এই নিয়ে কোনও আপডেট নেই। ট্রাম্পকে উদ্ধৃত করে সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, 'মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা করে বলেছিলেন, পাকিস্তানের বিপুল জ্বালানি ভাণ্ডার থেকে তেল উত্তোলন করবে আমেরিকার সংস্থা। আমরা এই আবহে সংস্থা চূড়ান্ত করার কাজ করছি। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ভবিষ্যতে ভারতকে তেল বিক্রি করবে পাকিস্তান। এই আবহে আমি জানতে চাই, এই তেল খোঁজার কাজে পাকিস্তানের সঙ্গে কতটা পারস্পরিক সহযোগিতা এগিয়েছে?'
সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে মার্কিন জ্বালানি সচিব ক্রিস রাইট বলেন, 'আমি এই বিষয়ে এখনও কোনও মার্কিন সংস্থার সঙ্গে কথা বলিনি বা বিষয়টি খতিয়ে দেখিনি। তবে আপনার প্রশ্নের ভিত্তিতে আমি এই বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর চালাব। আমার শ্বশুর ৩০ বছর আগে পাকিস্তানে গ্যাস উত্তোলনের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আর সবাই জানে পাকিস্তানে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার রয়েছে। তবে সেই ক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমে গিয়েছিল। তাই গ্যাস উৎপাদন কমে গিয়েছে পাকিস্তানে। তবে সেই সব ভাণ্ডার এখনও সেখানেই আছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই কথাগুলো আমার পছন্দ হয়েছে। আমেরিকান সরকার এবং আমাদের দেশের সংস্থাগুলি পাকিস্তানের সঙ্গে পার্টনারশিপ করতে আগ্রহী থাকবে। কীভাবে পাকিস্তানের থেকে আরও জ্বালানি উৎপাদন করা যায়, সেদিকে আমাদের চেষ্টা থাকবে। প্রশ্নটার জন্য ধন্যবাদ। এখন আমি এই বিষয়টি নিয়ে আরও বেশি করে খতিয়ে দেখব।'
উল্লেখ্য, এর আগে অপারেশন সিঁদুরের পর থেকে একমাসের ব্যবধানে দু'বার আমেরিকায় গিয়েছিলেন পাকিস্তানি সেনা প্রধান আসিম মুনির। যা ঘিরে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। এদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে জ্বালানি চুক্তি নিয়ে ট্রাম্প ঘোষণা দেওয়ার পর নিজের দেশে দাঁড়িয়ে মুনির দাবি করেছিলেন, বালোচিস্তানে খনিজ পদার্থ উত্তোলন থেকে পাকিস্তানের বাৎসরিক ২ বিলিয়ন ডলার লাভ হবে। তবে এই সব খনিজ পদার্থ বা তেল খোঁজা নিয়ে কোনও কাজ এগোয়নি।