ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে নিউইয়র্কে আছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। রাশিয়ার থেকে তেল কেনা ইস্যুতে ভারতের সমালোচনা করার বিষয়ে পশ্চিমাদের দ্বিচারিতার তীব্র নিন্দা করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের নাম না করে তিনি বলেন, 'বৈশ্বিক উন্নয়নকে বিপন্ন করে আমরা আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারি না।' তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই মুহূর্তে বিশ্বের পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এর ফলে গ্লোবাল সাউথ এবং সারা বিশ্ব প্রভাবিত হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী। নিউইয়র্কে জি২০ সদস্য দেশগুলির মধ্যে এক বৈঠকে জয়শঙ্কর বলেন, 'আমরা শান্তির মাধ্যমে উন্নয়ন আনতে পারি, কিন্তু উন্নয়নকে বিপন্ন করে আমরা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারি না।' শান্তি ও সংলাপের মাধ্যমেই যে কোনও সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানান জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, 'উন্নয়নের মাধ্যমেই শান্তি আসতে পারে। জ্বালানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাণিজ্যকে আরও অনিশ্চিত করে তোলা হলে কারও কোনও উপকার হবে না। ইতিমধ্যে একটি ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে রয়েছে জ্বালানি বাণিজ্য। তাই যেকোনও ইস্যু সংলাপ, কূটনীতির মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। এতে জটিলতা যুক্ত করা ঠিক নয়।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি সচিব ক্রিস রাইট ভারতের তেল কেনা নিয়ে বড় মন্তব্য করেন সম্প্রতি। রাশিয়ার থেকে ভারতের তেল কেনার সম্পর্কে মার্কিন অবস্থান পরিষ্কার করে তিনি বলেছেন যে ভারত বিশ্বের যে কোনও দেশ থেকে তেল কিনতে পারে, শুধুমাত্র রাশিয়ার থেকে নয়। তিনি আরও বলেন, 'ভারত রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনে লাভবান হচ্ছে, তবে তারা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। তারা তেল কিনে এমন একজন ব্যক্তিকে (পুতিন) অর্থ দিচ্ছে যিনি প্রতি সপ্তাহে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করছেন।'
রাইট বলেন, 'বিশ্বে প্রচুর তেল রফতানিকারক রয়েছে। রাশিয়ার তেল কেনার দরকার নেই ভারতের। ভারত রাশিয়ার তেল কেনে কারণ সেটা সস্তা। অন্য কেউ রাশিয়ার তেল কিনতে চায় না; তাই ছাড়ে তেল বিক্রি করতে হয় রাশিয়াকে।' তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে 'শাস্তি' দিতে চায় না, বরং ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চায় এবং ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তেল কিনতে পারে। তিনি বলেন, 'আমরা চাই ভারত তেল কেনার জন্য আমাদের সঙ্গে কাজ করুক। আমেরিকা তো তেল বিক্রি করার জন্য বসে আছে, বাকি আরও অনেকের কাছে তেল আছে। আমরা ভারতকে শাস্তি দিতে চাই না। আমরা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চাই এবং ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বাড়াতে চাই।'
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা নিয়ে সম্প্রতি রাষ্ট্রসংঘের মঞ্চে বড় বিবৃতি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই যুদ্ধের জন্য ফের একবার ভারতকে দায়ী করেন ট্রাম্প। মঙ্গলবার রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় (ইউএনজিএ) দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, রাশিয়ার তেল কিনে ইউক্রেনে রুশ যুদ্ধের 'প্রধান অর্থদাতা' ভারত এবং চিন। ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ান তেল কেনার জন্য ভারতের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
এদিকে সম্প্রতি মার্কিন বাণিজ্য সচিব স্কট বেসেন্ট ভারত নিয়ে সুর কিছুটা নরম করেন। তিনি বলেন, ধীরে ধীরে ভারত রাশিয়ার থেকে তেল কেনা কমাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এরই সঙ্গে তিনি ইউরোপীয় দেশগুলিতে তোপ দেগে বলেন, 'ভারতে শোধিত রাশিয়ান তেল কিনছে ইউরোপ। ইউরোপ নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অর্থায়ন করছে।'