সৃজলা গুহ পেশায় উকিল, সামাল দেন ব্যবসাও। তবে সবটার মধ্যে ভারসাম্য রেখেই একের পর এক ভালো ভালো কাজ উপহার দিয়ে চলেছেন তাঁর অনুরাগীদের। ছোট পর্দা থেকে পথ চলা শুরু করেছিলেন নায়িকা। বর্তমানে নানা সিরিজেও ধরা দিয়েছেন তিনি। চলতি মাসের ২০ জুন আসছে অভিনেত্রীর নতুন সিরিজ 'বাতাসে গুনগুন'। শত ব্যস্ততার মাঝেও নতুন সিরিজ থেকে কাজের খুঁটিনাটি, ব্যক্তিগত ভাবনা চিন্তা নিয়ে হিন্দুস্তান টামস বাংলার সঙ্গে খোলামেলা আড্ডায় ধরা দিলেন সৃজলা।
আগে অনেকবারই হয়েছে ত্রিকোণ প্রেমের গল্প, তবে এবার সেখানে আপনি, কিন্তু এছাড়া দর্শকরা আর কী কী নতুন পেতে চলেছেন?
সৃজলা: এটা ঠিক ত্রিকোণ প্রেমের গল্প নয়। ভালো ভাবে ট্রেলারটা দেখলে বোঝা যাবে যে, একটা মেয়ে একটা ছেলের জন্য কীভাবে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এটা আসলে মানসিক রোগ। যে এটায় ভুগছেন তাঁর সঙ্গে যখন আরও কিছু মানুষ জড়িয়ে পড়েন তখন সেটা তাঁদের জন্য কীভাবে ক্ষতিকারক হতে পারে, জীবনকে কীভাবে নষ্ট করে দিতে পারে, সেই গল্প উঠে আসবে।
হ্যাঁ, 'পল্লবী'র প্রভাব প্রবল...
সৃজলা: এখানে 'পল্লবী' নামের যে মেয়েটির গল্প দেখানো হয়েছে সেও কিন্তু পরিস্থিতির শিকার। ছোটো থেকে ভালোবাসা না পেয়ে পেয়ে একটা অভাবের জায়গা তৈরি হয়েছে। তার ফলে সে বড় হতে হতে এমন একটা টাইম বোমে পরিণত হয়েছে যে, ভালোবাসার জন্য সব কিছু করতে পারে। মানুষ অনেক দিন অনাহারে থাকার পর, যখন সে চুরি ডাকাতির পথ বেছে নেয়, তখন সেটা ক্রাইম হয়ে যায়। কিন্তু তাঁর অবস্থাটা কেউ বোঝার চেষ্টা করে না। এখানেও ভালোবাসা না পেয়ে পেয়ে মেয়েটার এই অবস্থা। সে কাউকে ভালোবেসে ফেলেছে আর তারপর তার মনে হচ্ছে যে এই মানুষটাকেই চাই যেভাবে হোক।
পর্দায় 'পল্লবী' হয়ে ওঠার জন্য কতটা মানসিক ভাবে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়েছিল?
সৃজলা: চরিত্রটা একদম অন্যরকম। এই ধরণের চরিত্র আমি আগে কখনও করিনি। নির্মাতা যে আমার উপর বিশ্বাস রেখেছেন এটা আমার বড় প্রাপ্তি। এই চরিত্রটার জন্য মানসিক প্রস্তুতই বলতে, চরিত্রটা নিয়ে ভীষণ ভাবতে হয়েছে যে, একটা মানুষ কোন পর্যায় গেলে এটা করতে পারে। আমি 'পল্লবী'কে নেগেটিভ দেখাতে চাইনি। আমি এমন ভাবে চরিত্রটা তুলে ধরতে চেয়েছি, যেখানে মানুষ ওর কষ্টটাও বোঝে। একটা মানুষ সংসার ভাঙছে মানেই, সে সমাজের চোখে খারাপ। আমি চেয়েছি দর্শকরা যেন একটু হলেও পল্লবীর গল্পটা অনুভব করে। কারণ ও তো জন্ম থেকেই এরকম ছিল না। কীভাবে এমন হল? সবটা নিয়ে আমাকে খুব ভাবতে হয়েছে।
তবে সমাজে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে 'পল্লবী'দের মতো সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তিদের নেগেটিভ ভাবেই দেখা হয়...
সৃজলা: নেগেটিভ-পজেটিভ নয়, এখানে প্রশ্নটা ঠিক-ভুলের। এক্ষেত্রে 'পল্লবী' ভুল। কিন্তু সমাজের দিক তাকালে যে, ঠিক-ভুল গুলো দেখা যায় সেটার সিদ্ধান্ত কারা নেন? মানুষ নিজেই নেন। বিয়ে থেকে শুরু করে সমস্ত নিয়মই তো মানুষের বানানো। কিন্তু কেউ কাউকে ভালোবেসে ফেলবে কিনা, বা কাউকে কারুর ভালো লাগবে কিনা সেটা তো কেউ ঠিক করে দিতে পারে না। কেউ যদি কোনও সম্পর্কে যান, তারপর সেখানে থেকে অন্য কাউকে ভালো লেগে যায়, সেটা কি করে দোষ হতে পারে? আর একটা সম্পর্কে যখন কোনও তৃতীয় ব্যক্তি ঢুকে যায় সেটা কখনওই তাঁর দোষ হতে পারে না। সেই সম্পর্কের মধ্যে নিশ্চয়ই অনেক ফাটল ছিল, যেখান দিয়ে তাঁর প্রবেশটা ঘটেছে। সেই ফাঁক না থাকলে কেউ ঢুকতে পারে না। তাই একটা সম্পর্ক দুটো মানুষ কতটা ভালো করে ধরে রাখতে পারবে, সেটা দুটো মানুষের দায়বদ্ধতার উপর নির্ভর করে, কোনও তৃতীয় ব্যক্তির উপর নয়।
যদি আপনার সম্পর্কে কোনও তৃতীয় ব্যক্তি আসেন সেটা কীভাবে দেখবেন?
সৃজলা: যদি আমি কোনও সম্পর্কে থাকি, আর দেখি সেখানে তৃতীয় ব্যক্তির কোনও প্রভাব পড়ছে। আমি প্রাথমিক ভাবে দেখব আমার স্বামী বা আমার প্রেমিক সেই সময় কীভাবে রি-অ্যাক্ট করছেন। আমার সঙ্গীর থেকে কোনও অনুভূতি যদি না থাকে, তাহলে আমার সম্পর্কে কোনও রকমই চিড় ধরবে না। কিন্তু যদি দেখি তাঁর দিক থেকেও একটা অনুভূতি কাজ করছে, তাহলে যেতে দেওয়া ভালো। কারণ আমি কিছু জোর করে আটকে রাখায় বিশ্বাসী নই। কাউকে জোর করে, হুমকি দিয়ে, ঝগড়া করে যদি কিছু ধরে রাখতে হয়, তখন সেই ঘরটা আর ঘর থাকে না। সেখানে শান্তি থাকে না।
তবে সিরিজের ক্ষেত্রে দু'বার সেই তৃতীয় ব্যক্তির ভূমিকায় আপনাকে দর্শকরা পেলেন, অনেকে তো 'বাতাসে গুনগুন' ট্রেলার দেখে 'কলঙ্ক'-এর প্রসঙ্গ টানছেন...
সৃজলা: 'কলঙ্ক'-এ আমি যে চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম তার থেকে এই চরিত্রটা একদম আলাদা, কোনও মিল নেই। 'কলঙ্ক'-তে একটা সাধারণ মেয়ের চরিত্রে আমি অভিনয় করেছিলাম। সে অফিসে একজনকে ভালোবেসে ফেলেছিল। ভালো-খারাপটা বিচার করার ক্ষমতা তার মধ্যে ছিল। তাই সে যে মানুষটাকে ভালোবেসে ছিল তার ও তার পরিবারের ভালো চাইত। কিন্তু 'বাতাসে গুনগুন'-এর 'পল্লবী' ভীষণ ভাবে মরিয়া। ও ঝড়ের মতো, 'কলঙ্ক'তে কিন্তু আমার চরিত্রটা তেমন ছিল না। কিন্তু এখানে 'পল্লবী' 'অরিন্দম'-এর জীবনটাকে পুরো ধ্বংস করে দিচ্ছে। 'পল্লবী'র বিষয়টা হচ্ছে, 'আমি পুড়ে যাই ক্ষতি নেই, কিন্তু সবাইকে পুড়িয়ে ছাড়ব'।
হ্যাঁ, তবে পর পর দুটো সিরিজ হল, শুরুতে মেগাতেও কাজ করছেন, কোন মাধ্যমে কাজ করতে বেশি উপভোগ করেন?
সৃজলা: আমি পেশাগত দিক থেকে একজন উকিল। আমাকে ব্যবসাও সামলাতে হয়। আমি অভিনয়টা করি কারণ আমি অভিনয় করতে ভালোবাসি। সিরিজ আর মেগা দু' জায়গাতেই কাজের অভিজ্ঞতা খুব ভালো। আমার ছবি করারও ইচ্ছে রয়েছে। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল চরিত্রটা। যদি সেটা আমার করতে ভালো লাগে, যে কোনও মাধ্যমেই আমি স্বাচ্ছন্দ্য। আমি একটাই মেগা করেছি, সেটার অভিজ্ঞতাও খুব সুন্দর। টেলেভিশনে সকলের সঙ্গে কাজ করতে করতে সকলের সঙ্গে খুব সুন্দর একটা বন্ধন তৈরি হয়ে যায়। আর টেলিভিশনের মাধ্যমেই আমি বহু সংখ্যক দর্শকদের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলাম। সেই দর্শকরা আমাকে আজও ভালোবাসেন। আর তারপর সিরিজ এসেছে, মাধ্যমটা আলাদা। আমি আলাদা আলাদা ধরনের চরিত্র করার সুযোগ পাচ্ছি। হ্যাঁ-না বলার জায়গাটা থাকে। দুটো মাধ্যম তাদের জায়গা থেকে আলদা এবং সুন্দর।
একটা মেগা করেই দর্শকদের এত ভালোবাসা পেয়েছেন, তাঁরাও মুখিয়ে আছেন আপনি আবার কবে মেগায় ফিরবেন সেই আশায়...
সৃজলা: টেলিভিশনের সম্ভবনা এই মুহূর্তে একটু কম। টেলেভিশনে অনেকটা সময় দিতে হয়, সেই সময়টা দেওয়া আমার কাছে খুব বড় একটা চ্যালেঞ্জ। আমাকে তো অনেক কিছু করতে হয়, আর আমার অনুরাগী তা জানেন।