গত ১৪ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসের আবহে বড় পর্দায় মুক্তি পেয়েছে ‘ধূমকেতু’। এই ছবির হাত ধরেই প্রায় ১০ বছর পর দেব-শুভশ্রীকে একসঙ্গে বড় পর্দায় দেখেছিলেন দর্শকরা। কিন্তু ‘ধূমকেতু’ যদি ২০২৫ সালে তৈরি হত, তাহলে কি শুভশ্রীকে ছবিতে নায়িকা হিসেবে বেছে নিতেন প্রযোজক দেব? এক সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্নে অভিনেতা জানিয়েছিলেন, শুভশ্রী ইতিমধ্যেই দুই বাচ্চার মা, ফলে তাঁর মুখের সারল্য হারিয়ে গিয়েছে। 'রূপা'র মুখের সারল্য তাঁর মুখে খুঁজে পাওয়া যেত না বলেই তিনি হয়তো নায়িকাকে কোনও পার্শ্ব চরিত্রের জন্য বেছে নিতেন। নায়কের এই মন্তব্য নিয়ে ঝড় ওঠে সমাজমধ্যমের পাতায় দানা বাঁধে বিতর্ক।
এরপর নয়নদীপ রক্ষিতকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শুভশ্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘একটা সেন্সেবল মানুষ কীভাবে এই ধরনের কথা বলে? আমার জানা নেই। আমার পার্শ্ব চরিত্র করতে কোনও সমস্যা নেই। আমি ‘সন্তান’ করেছি। আমার কাছে চরিত্রটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ২০২৫ দাঁড়িয়ে এরকম একটা অসম্মান সূচক মন্তব্য, যেখানে তুমি একটা অভিনেত্রীর সঙ্গে ছবির প্রচার করছ, সেখানে এটা কীভাবে, আমি জানি না…।’ ফলে সবটা মিলিয়ে আরও সরগরম হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। নেটিজেনরা নানা ভাবে কটাক্ষ করতে থাকেন দেবকে। এবার এই সবটা নিয়ে মুখ খুললেন দেব।
আরও পড়ুন: রাধাষ্টমীতে মেয়ের মুখ দেখালেন গৌরব-চিন্তামণি! নাম রাখলেন রাস্মিতা, জানেন এই নামের মানে কী?
আম অর্পিতা চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নায়ক এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘যত বেশি ভালোবাসা তত বেশি অভিমান থাকে মানুষের। আমার মনে হয় শুভশ্রী যে মন্তব্যটা করেছে সেটা পুরোপুরি ভালোবাসা থেকেই করেছে। না হলে এক ঘণ্টা সাক্ষাৎকারে সে আমাকে নিয়েই বলেছে, বা এক ঘন্টা আমাকে নিয়েই নষ্ট করেছে, সেটা ভালোবাসা ছাড়া হয় না। শুভশ্রী ওই একটা লাইনকে ধরেছে। কিন্তু আমি প্রথম ইন্টারভিউ থেকে বলছি যে, যেভাবে ও সংসার এবং কাজকে হ্যান্ডেল করছে, সেই কথাগুলো ও নিশ্চয়ই শুনেছে। পুরো প্রমোশান জুড়ে ওঁর সঙ্গে আমি সুপারস্টারের মতো ব্যবহার করেছি। আমার টিম যখন আমার জন্য গান বানিয়েছিল, আমি বলেছিলাম ওঁর জন্যও বানানো উচিত। কারণ ও সুপারস্টার। ওঁর জন্য গান বানিয়ে সেটা ওঁকে নিবেদনও করেছিলাম। সেটা সম্মান নয়?’
এরপর নায়ক সেই চর্চিত মন্তব্য নিয়ে মুখ খোলেন তিনি বলেন, ‘আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে এখন ধূমকেতু করলে শুভশ্রীকে নেওয়া হত কিনা। আমি ওঁকে কথা দিয়েছিলাম আমার প্রযোজনা সংস্থার প্রথম কাজে ও থাকবে তাই ওঁকে রাখতাম। ১০ বছর আগে যে চরিত্রটার জন্য ওঁকে নেওয়া হয়েছিল সেটায় ও ফিট করেছিল। কিন্তু আজ যদি কাস্টিং হয়, সেখানে ওঁর জায়গায় যদি কেউ ডিজার্ভিং হন, তাঁকে কাস্ট করব। আমি ওখানে এটাও বলেছিলাম যে, দেব কেও কাস্টিং করতাম না। কারণ দেবের মধ্যেও সেই সারল্য নেই। আমি কখনও বলিনি দুটো বাচ্চার জন্য ওঁর সারল্য চলে গিয়েছে, যেভাবে বলা হচ্ছে বা ভিক্টিম কার্ড খেলা হচ্ছে। ১৪ বছর আগেও ও যখন বলেছে, ‘বাথরুমে কেঁদেছি’, সেই সময়ও কিছু বলিনি। সব সহ্য করেছি। আজকেও কিছু বলব না। কারণ আমার মনে হয় এটাই তো সম্মান দেওয়া। ও কিছু বলেছে, আমার কতটা খারাপ হবে আমি জানি না। কিন্তু আমি যদি আজ দুটো কথা ওঁকে নিয়ে বলি তাহলে ওঁর খারাপ হবে। ওঁর সম্মানটা কোথাও আমারই সম্মান।’
আরও পড়ুন: ভাগ্নের জন্মদিনে সাহেব পোস্ট করতেই ‘সুস্মিতা মামি’ বলে নায়িকাকে সম্বোধন নেটিজেনদের!
নায়ক আরও বলেন, ‘আমি নিজের সীমাটা বুঝে কথা বলেছি। ওঁর যাতে কোথাও সম্মানহানি না হয় সেই চেষ্টা করেছি। ওঁর সঙ্গে সুপারস্টারের মতো ব্যবহার করেছি। আর ও তো নিজেই বলে যে, ও দু সন্তানের মা। সেটা তো গর্বের ব্যপার। ও বর্ধমান থেকে এসে নিজেকে যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছে। এখনও যেভাবে নিজেকে মেন্টেন করছে ও কোয়েল ওঁদের সেই জার্নিটা নিয়ে ছবি হওয়া উচিত।’
সামনেই নায়িকাকে ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে…’ ছবিতে দেখা যাবে নটী বিনোদিনীর ভূমিকায়। এর আগে এই ভূমিকায় প্রিয়াঙ্কা সরকারের কাজ করার কথা ছিল। সেই প্রসঙ্গে টেনে দেব বলেন,'চার বছর আগে প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে পোস্টার সামনে এনেছিলেন রানাদা। আজ সেই চরিত্রটা ও করছে, কারণ ও বেশি ডিজার্ভিং তাই। আজ যদি ‘চ্যালেঞ্জ’ বা ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া’ হত আমি কি করতাম?'
দেব আরও বলেন,'আমাকে আমার টিম বলেছিল সেদিনের সাক্ষাৎকার দেখে ওঁর খারাপ লেগেছে। তখন ও মুম্বইতে শ্যুট করছিল, আমি ওঁকে ফোন করেছিলাম। জানতে চেয়েছিলাম তোমার কি কিছু হয়েছে? বা খারাপ লেগেছে? তখন বলেছিল যে, 'না আমার কিছু হয়নি'। তাও আমি বলেছিলাম, আমি শেষটা খারাপ ভাবে করতে চাই না। এমনকী আমাদের স্পেশাল স্ক্রিনিংয়ের ডেট যেদিন ঠিক হয়েছিল ওঁকে জানিয়েছিলাম। ওঁকে বলেছিলাম, 'আমি চাই দেব শুভশ্রীকে আরও একবার দেখা যাক'। ও আমাকে বলেছিল, 'দেখছি দেখে জানাচ্ছি'। তারপর আমি দ্বিতীয় ফোনটা রাজ চক্রবর্তীকে করি, ওঁকে বলি, ‘আমরা শনিবার স্পেশাল স্ক্রিনিংটা করছি। আমি চাই, তুমি এসো’।'
ধূমকেতুর ট্রেলার লঞ্চের দিন শুভশ্রীকে মঞ্চে দাঁড়িয়ে ইনস্টাগ্রামে ফলো করেছিলেন দেব। সেদিন রাতে রুক্মিণী তাঁকে ফোন করে রাজকেও ফলো করতে বলেন। তা দেব করেনও। সেই কথাও নায়ক ভাগ করে নেন। শেষে নায়ক বলেন, ‘আমি চাইনি যে আমার জন্য কখনও খারাপ হোক। আমি সব সময় চেয়েছি আমার জন্য ভালো হোক। যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর। এটাই তো জীবন, তাই কষ্ট হয় আবার হয়ও না। ধূমকেতু এখনও রমরম করে চলছে। বাইরে তৃতীয় ব্যক্তি যা করে করুক, কিন্তু ঘরের লোক এমন করলে খারাপ লাগে।’