লখনউ সুপার জায়ান্টসের অধিনায়ক ঋষভ পন্ত আইপিএলের ১৮তম আসরের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নিজের সেরা পারফরম্যান্স করলেন। একানা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে তিনি ৬১ বলে অপরাজিত ১১৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। তাঁর ইনিংসের দলকে ২২৭/৩ রানে পৌঁছে যায় লখনউ। তবে রান তাড়া করতে নেমে জিতেশ শর্মা সকলকে অবাক করে দেন। দুরন্ত অর্ধশতরান করেন এবং ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলে দলের জয় নিশ্চিত করেন। এই ম্যাচটি ৬ উইকেটে জিতে আইপিএল ২০২৫ কোয়ালিফায়ার ১ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। লখনউয়ের লক্ষ্য ১৮.৪ ওভারে অর্জন করে RCB.
ঋষভ পন্ত ও মিচেল মার্শ (৬৭) দুর্দান্ত এক ব্যাটিং প্রদর্শনী উপহার দিয়ে বেঙ্গালুরুর দুর্বল বোলিং আক্রমণকে ধ্বংস করে দেন এবং দলের স্কোরবোর্ডে বিশাল রানের পাহাড় গড়ে তোলেন। এই ম্যাচের আগে পর্যন্ত একানা স্টেডিয়ামে সর্বোচ্চ ২০৭ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ছিল।
এদিনের ম্যাচে লখনউ সুপার জায়ান্টস অধিনায়ক শেষ পর্যন্ত ক্রিজে ছিলেন এবং একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকান। তার ১১৮ রানের অপরাজিত ইনিংসে ছিল ১১টি চার ও ৮টি ছক্কা। স্ট্রাইক রেট ছিল ১৯৩.৪৪।
টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার পর, তৃতীয় ওভারে নুয়ান তুষারা ম্যাথিউ ব্রিটজকেকে (১৪) ইয়র্কার দিয়ে বোল্ড করে আরসিবিকে দারুণ সূচনা এনে দেন। দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার বলটি একেবারে মিস করে বসেন, বল তার অফ-স্টাম্প উড়িয়ে দেয়।
চমক দেখিয়ে পন্ত নিজেকে উপরে ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন করেন। পাওয়ার প্লের শেষে লখনউ ৫৫/১ স্কোরে পৌঁছায়। মার্শ তার শক্তিমত্তা প্রদর্শন করে ৮ম ওভারে স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে একটি ছক্কা হাঁকান। নবম ওভারের প্রথম বলেই পন্ত সুয়াশ শর্মার ভ্যারিয়েশন বুঝে গিয়ে বলটিকে সীমানার বাইরে পাঠান। টানা দুটি চার মেরে ১৬ রান নিয়ে ফিফটি পূর্ণ করেন এবং লখনউ ১০ ওভারে পৌঁছে যায় ১০০/১ স্কোরে।
এরপরও চলতে থাকে বাউন্ডারি বর্ষণ। মার্শ ডিপ মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা মেরে এই মরশুমে নিজের সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। পন্ত আবারও সুয়াশকে চেপে ধরে একটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকিয়ে ওভার থেকে ১৩ রান নেন।
পন্ত ছক্কা হাঁকাতে থাকেন ও রোমারিও শেফার্ডকে মারতে থাকেন। মার্শ ভুবনেশ্বর কুমারকে টানা দুটি ছক্কা মারেন, তবে শেষ হাসি হাঁসেন ভুবি—একটি বাইরে যাওয়া ডেলিভারিতে মার্শ ক্যাচ দেন উইকেটকিপার জিতেশ শর্মার হাতে। ১৫২ রানের জুটি ভাঙার পর নিকোলাস পুরান এসে পন্তকে সঙ্গ দেন এবং ইনিংসকে উচ্চতায় পৌঁছে দেন। পন্ত ভুবনেশ্বরের শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেন।
১৮তম ওভারে একটি চার মেরে পন্ত চলতি আইপিএল মরশুমে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন এবং একটি ব্যতিক্রমী সেলিব্রেশন—সমার্সল্ট দিয়ে উদযাপন করেন। যেটি লখনউ ড্রেসিং রুমে চিৎকার ও করতালির মাধ্যমে প্রশংসিত হয়।
আরও পড়ুন … ইংল্যান্ড সফরের আগে টি দিলীপকে ফেরাল BCCI! দ্বিতীয় ওয়ার্ম-আপ ম্যাচে অনিশ্চিত গিল
পন্তকে থামাতে পারেননি যশ দয়ালও। ইনিংসের ১৯তম ওভারে পন্ত ব্যাটের মুখ খুলে একটি চার মারেন এবং পরে একটি ছক্কাও হাঁকান। শেষ ওভারে পুরান শেফার্ডকে চার মেরে স্বাগত জানান। পন্ত একটি ফুলটসকে ছক্কা মেরে তাঁর ছক্কা মারার দক্ষতা প্রদর্শন করেন। পুরান ১০ বলে ১৩ রান করে যশ দয়ালের হাতে ধরা পড়েন। শেষ বলে আবদুল সামাদ একটি সিঙ্গেল নেন এবং লখনউ তাদের ইনিংস শেষ করে ২২৭/৩ রানে।
আরও পড়ুন … ভিডিয়ো: ২৭ কোটি টাকা উসুল! LSG-র জার্সি গায়ে প্রথম শতরান করে ঋষভের বিশেষ সেলিব্রেশন
২২৮ রান তাড়া করতে নেমে দারুণ শুরু করেন ফিল সল্ট ও বিরাট কোহলি। ১৯ বলে৩০ রান করে সাজঘরে ফিরে যান ফিল সল্ট। ৬১ রানে ১ উইকেট হারানোর পরে মাঠে আসেন রজত পতিদার। তবে এদিন তিনিও বড় ইনিংস খেলেত পারেননি এবং সাত বলে ১৪ রান করে সাজঘরে ফিরে যান। এরপরেই সাজঘরে ফিরে যান লিয়াম লিভিংস্টোন। ৯০ রানে তিন উইকেট হারায় RCB. এরপরে ৩০ বলে ১০টি চার মেরে ৫৪ রান করার পরে আউট হন বিরাট কোহলি। ১১.২ওভারে ১২৩ রানের মধ্যেই ৪ উইকেট হারায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।
আরও পড়ুন … টস জিতে ভুল টিম লিস্ট জমা দিল RCB! একাদশে রজত পতিদারকে নেওয়া নিয়ে নাটক
এরপরে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পান মায়াঙ্ক আগরওয়াল ও জিতেশ শর্মা। তাঁরা এই ইনিংসকে পঞ্চম গিয়ারে ফেলেন। ঝড়ো ব্যাটিং করেন ও মাত্র ২২বলে অর্ধশতরান করেন জিতেশ শর্মা। তাঁকে দারুণভাবে সাপোর্ট করেন মায়াঙ্ক। শেষ পর্যন্ত ৩৩ বলে ৮টি চার ও ছয়টি ছক্কা মেরে অপরাজিত ৮৫ রানের ইনিংস খেলেন জিতেশ শর্মা। মায়াঙ্ক ২৩ বলে অপরাজিত ৪১ রানের ইনিংস খেলেন। এই জয়ের ফলে কোয়ালিফায়ার ১-এ এন্ট্রি করল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।