পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ফের আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে দলত্যাগ বিরোধী আইন। বিজেপি বিধায়কদের দলত্যাগ এবং তার পরও তাঁদের বিধানসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো নিয়ে যে বিতর্ক চলছিল, তারই আইনি লড়াইয়ের অংশ হিসেবে কলকাতা হাইকোর্টে লিখিত বক্তব্য জমা দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
আরও পড়ুন: ‘পলিটিক্যালি স্পনসর্ড!' প্রাক্তন সেনাকর্মীদের সভায় শুভেন্দু, সতর্কতা হাইকোটের
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর বিজেপির প্রায় আট-ন’জন বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। বিজেপির দাবি, দলত্যাগ বিরোধী আইন অনুসারে এঁদের বিধায়ক পদ খারিজ করা উচিত। সেই মর্মে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদনও জানানো হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও তাতে কোনও ব্যবস্থা না হওয়ায় শেষমেশ আদালতের দ্বারস্থ হয় বিজেপি।
সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয় কৃষ্ণনগর উত্তর আসনের বিধায়ক মুকুল রায়কে ঘিরে। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর তাঁকে বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসসি) চেয়ারম্যান করা হয়। সেই নিয়োগকেই প্রথম চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে যান শুভেন্দু অধিকারী। যদিও পরে মুকুল রায় পদ থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু তাঁর জায়গায় একই আসনের অন্য দলত্যাগী বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীকে বসানো হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি বিধায়ক পদ ছেড়ে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে লোকসভা ভোটে লড়েন। এখানেই শেষ নয়, এরপরও আলিপুরদুয়ারের দলত্যাগী বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলালকে পিএসসির চেয়ারম্যান করা হয়। এই ধারাবাহিকতায় ক্ষুব্ধ বিজেপি বিধায়কেরা গত সাড়ে চার বছরে পিএসসির একটিও বৈঠকে অংশ নেননি। তাঁদের অভিযোগ, স্পিকার দলত্যাগ বিরোধী আইনকে অগ্রাহ্য করছেন এবং দলত্যাগীদের পুরস্কৃত করছেন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে। বিরোধী দলের দাবি, এটি গণতান্ত্রিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী পদক্ষেপ।
গত সপ্তাহে বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি শেষ হয়। তবে রায়দান আপাতত স্থগিত রেখেছেন বিচারপতিরা। এরই মধ্যে আদালত শুভেন্দু অধিকারীকে লিখিত বক্তব্য জমা দেওয়ার অনুমতি দেয়। সেই নির্দেশ মেনে সোমবার বিরোধী দলনেতা নিজের বক্তব্য জমা দিলেন আদালতে।
রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, এই মামলার রায় শুধুমাত্র কয়েকজন দলত্যাগী বিধায়কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে না, বরং গোটা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রয়োগের ধারা কীভাবে হবে, তাতেও প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে আদালতের চূড়ান্ত রায়কে ঘিরে রাজ্যের রাজনীতিতে এখন টানটান উত্তেজনা।