শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির এক পুরনো মামলায় বড় পদক্ষেপ নিল সিআইডি। হাওড়ার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগে চারজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে তদন্তকারী সংস্থা। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক, তৎকালীন জেলা স্কুল পরিদর্শক (ডিআই), অভিযুক্ত শিক্ষক এবং আরও এক ব্যক্তি।
আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতিতে আদালতে হাজিরা পার্থর, নিজেকে নির্দোষ দাবি, থামালেন বিচারক
তদন্তে উঠে এসেছে, স্কুল সার্ভিস কমিশন গঠনের আগের সময়ে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল। তখন বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির হাতেই শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা ছিল। লিখিত পরীক্ষা ও সাক্ষাৎকারের পর তিনজন প্রার্থীর একটি প্যানেল তৈরি হয়। প্রথম প্রার্থী চাকরিতে যোগ দেন, কিন্তু কিছুদিন পর পদত্যাগ করেন। নিয়ম অনুযায়ী, সেই শূন্যপদে প্যানেলে থাকা দ্বিতীয় প্রার্থীকে সুযোগ দেওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু নিয়ম ভেঙে সরাসরি তৃতীয় প্রার্থী শেখ সিরাজুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়। অভিযোগ, দ্বিতীয় প্রার্থীকে না জানিয়েই তাঁর নামে জাল হলফনামা জমা দেওয়া হয়, যাতে দাবি করা হয় তিনি অন্যত্র কর্মরত এবং চাকরিটি নিতে অনিচ্ছুক। দ্বিতীয় প্রার্থী এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। আদালতে তিনি জানান, তাঁর নামে জমা দেওয়া হলফনামা সম্পূর্ণ ভুয়ো এবং তিনি চাকরিতে যোগ দিতে ইচ্ছুক ছিলেন। হাইকোর্ট এই ঘটনাকে গুরুতর অনিয়ম বলে চিহ্নিত করে এবং সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
সিআইডির তদন্তে প্রমাণ মেলে, প্যানেলের দ্বিতীয় প্রার্থীকে একেবারেই জানানো হয়নি। তাঁকে উপেক্ষা করে ভুয়ো কাগজপত্রের ভিত্তিতে শেখ সিরাজুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, নিয়ম অনুযায়ী প্রথম প্রার্থী পদত্যাগ করলে শিক্ষাদপ্তরকে জানানো দরকার ছিল। কিন্তু তা না করে শিক্ষাদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই নতুন করে নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়। এমনকি হাইকোর্ট নির্দেশ দেওয়ার পরও পদটি শিক্ষা দফতরের কাছে ফেরত পাঠানো হয়নি। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক তথা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিয়োগপত্রে সই করেছিলেন। পুরো প্রক্রিয়ার বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত ডিআইও অবগত ছিলেন। এছাড়া অভিযুক্ত শেখ সিরাজুল ইসলাম ও আরও এক ব্যক্তির নাম রয়েছে চার্জশিটে। সবার বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি এবং দুর্নীতি দমন আইনের ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। সিআইডির এই চার্জশিট জমা পড়ায় শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির আরেকটি অধ্যায় প্রকাশ্যে এল।