কলকাতা হাই কোর্টে প্রশ্ন উঠল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অস্তিত্ব নিয়ে। ডিস্ট্রিক্ট প্রাইমারি স্কুল কাউন্সিল (ডিপিএসসি) আদৌ রাজ্যে কার্যকর আছে কি না, তাই নিয়ে প্রশ্ন তোলে হাইকোর্ট। অভিযোগ, ২০১৫ সালের পর থেকে কোনও জেলার ক্ষেত্রেই নতুন করে ডিপিএসসি গঠন হয়নি। অথচ এই সংসদের উপরেই নির্ভর করে শিক্ষক নিয়োগ থেকে বদলি, এমনকি বেতন ও প্রশাসনিক নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
আরও পড়ুন: তন্ত্রসাধনায় নরবলি! ফাঁসির সাজা বাতিল করে ২ জনকে বেকসুর খালাস হাইকোর্টের
সোমবার পূর্ব মেদিনীপুরের একটি মামলার শুনানিতে বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ডিপিএসসি-র মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে নতুন সদস্য নিয়োগ এবং গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ছাড়া সংসদ চলতে পারে না। সচিবকে কেবল কর্মচারী বলেই চিহ্নিত করেন তিনি। তাই সচিব একা কোনও শিক্ষক বদলির সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এই মামলার সূত্রপাত ২০১৪ সালে। ওই বছর নীলাঞ্জনা মাইতি পূর্ব মেদিনীপুরে প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে চাকরি পান। পরে বদলি হয়ে একাধিক স্কুলে যোগ দিতে হয় তাঁকে। কিন্তু গত বছর জেলার সংসদ সচিব তাঁর আরও একবার বদলির নির্দেশ দেন। সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে নীলাঞ্জনা হাই কোর্টে যান। আদালত তাঁর বদলি বাতিল করে দেয়। কিন্তু পাঁচ দিনের মধ্যে ফের নতুন বদলির আদেশ জারি হয় সচিবের তরফে। এই নির্দেশও চ্যালেঞ্জ হয় আদালতে।
মামলাকারীর আইনজীবী ফিরদৌস সামিম জানান, শেষবার ২০১১ সালে ডিপিএসসি গঠিত হয়েছিল। মেয়াদ শেষ হয় ২০১৫-তে। তারপর থেকে কোনও বৈধ সংসদ না থাকায় সচিবের তরফে নেওয়া বদলির সিদ্ধান্ত আইনবিরুদ্ধ। তাঁদের দাবি, সচিব সংসদের সদস্য নন। আইন অনুযায়ী বদলির ক্ষমতা একমাত্র ডিপিএসসি-র কাছেই ন্যস্ত।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের যুক্তি অবশ্য অন্য। তাদের বক্তব্য, সংসদ একটি স্থায়ী কর্পোরেট বডি, শুধু সদস্যপদে পরিবর্তন হয়। তাই মেয়াদ শেষ হলেও কাজ চলতে থাকে। সেই যুক্তি মানতে নারাজ আদালত। হাই কোর্ট স্পষ্ট জানায়, ২০১৫ সালের পর নতুন বিজ্ঞপ্তি না থাকায় ডিপিএসসি আইনসম্মতভাবে গঠিত হয়নি। সচিব সদস্য নন, তাই বদলির ক্ষমতা তাঁর নেই। বিচারপতি ভরদ্বাজ নির্দেশ দেন, শিক্ষিকা নীলাঞ্জনা মাইতি পুরনো স্কুলেই থাকবেন।
১৯৭৩ সালের পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা আইন অনুযায়ী, প্রতিটি জেলায় ডিপিএসসি গঠনের কথা। সাধারণত ২০ থেকে ৩০ জন সদস্য নিয়ে এই সংসদ হয়, যেখানে থাকেন চেয়ারম্যান, জেলা স্কুল পরিদর্শক, সমাজ শিক্ষা আধিকারিক, পঞ্চায়েত প্রতিনিধি, শিক্ষক প্রতিনিধি এবং কয়েকজন জনপ্রতিনিধি। এদের হাতেই থাকে শিক্ষক নিয়োগ, বদলি, বেতন সংক্রান্ত সুপারিশ, পরিকাঠামো উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের মতো দায়িত্ব।
আদালতের পর্যবেক্ষণের ফলে এখন প্রশ্ন উঠছে, ২০১৫ সালের পর থেকে যে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা কতটা বৈধ? মামলাকারীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, শুধু পূর্ব মেদিনীপুর নয়, রাজ্যের বেশিরভাগ জেলায় বৈধ ডিপিএসসি নেই। সেই কারণে বিগত এক দশকে প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়োগ থেকে বদলি সবই আইনি সঙ্কটে পড়তে পারে।