পঞ্চাশ বছর বয়সেই পৃথিবীটা যেন ছোট হয়ে আসছিল। প্রথম দিকে শুধু বুক ধুকপুকানি দিয়ে শুরু হলেও, ধীরে ধীরে তা এমন পর্যায়ে পৌঁছাল যে তিনি কোনও কাজ করতে পারতেন না। এমনকি স্বাচ্ছন্দ্যে নড়াচড়াও করতে পারতেন না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হওয়ায় তাঁর এই পরিস্থিতি পরিবারের জন্যও ভীতিকর এবং হৃদয়বিদারক হয়ে ওঠে।
কী কী সমস্যা?
চিকিৎসককে দেখানোর পর জানান যায়, তাঁর হৃদপিণ্ডে একটি বড় ছিদ্র বা অ্যাট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট (atrial septal defect) রয়েছে। এখানেই শেষ নয়, দেখা যায় তাঁর দুটি হার্ট ভালভও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। হৃদপিণ্ডের সার্বিক অবস্থা খুব খারাপ। এই অবস্থায় কোনও ডাক্তার দ্রুত অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়েছিলেন। আবার অনেকে বলেন, ক্ষতি এতটাই বেশি যে আর কিছু করার নেই।
তিনটি সমস্যা, সমাধান কতগুলি?
বিএম বিড়লা হার্ট হসপিটালে ডা. সৌম্য গুহ এবং তাঁর টিম রাজেশের কেসটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখলেন। এক দফাতেই তিনটি বড় অস্ত্রোপচার জরুরি দেখা গেল। অ্যাট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট বন্ধ করা, মাইট্রাল ভালভ এবং ট্রাইকাস্পিড ভালভ মেরামত করা। দুর্বল হৃদপিণ্ডের জন্য ঝুঁকি ছিল অনেক বেশি।
আরও পড়ুন - PCOS এবং PCOD-এর তফাত জানেন না অনেকেই, কেন আলাদা রোগ দুটো? বুঝিয়ে বললেন চিকিৎসক
ভালভ মেরামতের সিদ্ধান্ত
ভারতের বেশিরভাগ কেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্ত ভালভ প্রতিস্থাপন করাই বেশি প্রচলিত, কারণ রিউম্যাটিক রোগের কারণে ছিদ্র মেরামত করা বেশ কঠিন। অনভিজ্ঞ হাতে ব্যর্থতার হারও বেশি হতে পারে। তবুও বিশ্বব্যাপী নির্দেশিকা অনুযায়ী, যদি সম্ভব হয়, ভালভ মেরামত করায় দীর্ঘমেয়াদী ভালো ফল এবং জীবনের মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
কী করা হল শেষমেশ?
এই অবস্থায় ডা. গুহের টিম আলোচনার পর রাজেশের ভালভগুলো মেরামতের সিদ্ধান্ত নিলেন। মাইট্রাল এবং ট্রাইকাস্পিড দুই ভালভই মেরামত করা হয়। এর পর অ্যাট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট বন্ধ করার জন্য ফেনিস্ট্রেটেড ক্লোজার কৌশল ব্যবহার করা হয়। যাতে সুস্থ হওয়ার সময় হৃদপিণ্ডের উপর চাপ না পড়ে। অস্ত্রোপচারটি দীর্ঘ এবং জটিল হলেও, রাজেশের অবস্থা স্থিতিশীল হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে তিনি হাঁটাচলা করতে শুরু করেন।
আরও পড়ুন - জেমিনি AI দিয়ে শাড়ির সাজে দেখছেন নিজেকে? বিপদ ডেকে আনছেন না তো?
কী বললেন চিকিৎসক
চিকিৎসকের কথায়, ‘রাজেশের মতো জটিল পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা এবং দলগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে গুরুতর রোগও মোকাবিলা করা যায়। প্রতিস্থাপনের পরিবর্তে মেরামতের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রাজেশ সুস্থ হয়ে উঠেছেন দ্রুত। এই অস্ত্রোপচারে প্রমাণিত হল সবসময় প্রতিস্থাপনই একমাত্র পথ নয়, মেরামতও সম্ভব।’