‘বর্জ্যই সম্পদ’, এবার এই ধারণাকেই ভিত্তি করে নতুন পথে হাঁটছে কলকাতা পুরসভা। শহরের প্রতিদিনের বিপুল পরিমাণ নির্মাণ-বর্জ্য এতদিন যেখানে সমস্যা তৈরি করত, সেখানে এবার সেই জঞ্জালই হয়ে উঠছে আয়ের উৎস। পুরসভার উদ্যোগে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটে উৎপাদিত কাঁচামাল বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। লক্ষ্য, একদিকে যেমন শহরকে বর্জ্যমুক্ত করা, অন্যদিকে তেমনই পুরসভার কোষাগারে টাকার অঙ্ক বাড়ানো।
আরও পড়ুন: বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জোর, রাজ্যজুড়ে গড়ে তোলা হবে আরও ৬৮টি কেন্দ্র
রাজারহাটের পাথরঘাটায় পিপিপি মডেলে স্থাপন করা হয়েছে নির্মাণ-বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র। এখানে প্রতিদিন গড়ে ১৭০-১৮০ টন বর্জ্য পুনর্নবীকরণ করে প্রায় ১৫৫-১৬৫ টন ব্যবহারযোগ্য কাঁচামাল পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট মিশ্রণের উপযোগী কংক্রিটের গুঁড়ো, বিভিন্ন ধরনের বালি এবং স্টোনচিপ। এগুলি ফের নির্মাণকাজে ব্যবহারযোগ্য। পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই কাঁচামালের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি টনে ৮৪৯ টাকা। এর সঙ্গে পরিবহণ খরচ যোগ করে বিক্রিমূল্য দাঁড়াচ্ছে ১,১৯৯ টাকা থেকে ১,৪১৯ টাকা প্রতি টনে। পরিবহণের খরচ দূরত্ব অনুযায়ী আলাদা হবে প্রতি টনে ন্যূনতম ৩৫০ টাকা থেকে সর্বাধিক ৫৭০ টাকা। পুর কমিশনারের নোটিসে বলা হয়েছে, দুই বছর অন্তর এই দরের তালিকা সংশোধন করা হবে।
জঞ্জাল সাফাই ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দফতরের এক আধিকারিক জানান, পুরসভা জমি দিয়েছে, আর প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট চালাচ্ছে বেসরকারি সংস্থা। উৎপাদিত কাঁচামালের বিক্রির টাকা সংস্থার কাছে যাবে। তবে পরিবহণ বাবদ প্রতি কিলোমিটারের খরচ পুরসভার রাজস্বে জমা হবে। পুরসভার হিসাবে, যদি প্রতিদিন গড়ে ১৫০ টন কাঁচামাল বিক্রি হয়, তাহলে ন্যূনতম ৫২,৫০০ টাকা থেকে সর্বাধিক ৮৫,৫০০ টাকা পর্যন্ত আসবে কোষাগারে। বার্ষিক হিসেবে এই আয় ছাড়িয়ে যাবে ৩০ কোটি টাকা। ভবিষ্যতে প্রক্রিয়াকরণের পরিমাণ বাড়লে আয়ের অঙ্কও আরও বাড়বে বলে আশা কর্তৃপক্ষের। অর্থনীতির পাশাপাশি পরিবেশের দিক থেকেও এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, পুনর্নবীকরণকৃত কাঁচামাল ব্যবহার করলে নির্মাণ প্রকল্পের খরচ অন্তত ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। এতে একদিকে যেমন নির্মাণ খরচ সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে বর্জ্য নিয়ন্ত্রণেও বড় ভূমিকা রাখবে এই প্রকল্প। কলকাতা পুরসভার এই পদক্ষেপ শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল বলেই মনে করছেন অনেকে।