কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নতুন জীবন পেলেন ত্রিপুরার আগরতলার এক তরুণী। তাঁর পেট থেকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বের করা হয়েছে প্রায় ১০ কেজি ওজনের টিউমার। চিকিৎসকদের মতে, এটি এক বিরল ও চ্যালেঞ্জিং কেস। কারণ রোগীর জন্মগত প্লেটলেট সমস্যার কারণে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি ছিল চরম মাত্রায়।
আরও পড়ুন: ইন্টার্ন নিগ্রহকে ঘিরে উত্তেজনা মালদা মেডিক্যালে, অধ্যক্ষকে রাতভর ঘেরাও
৩৩ বছরের ওই তরুণীর নাম (পরিবর্তিত) সমর্পিতা দাস। অবিবাহিতা সমর্পিতা দীর্ঘদিন ধরে তীব্র পেটব্যথা, হজমের সমস্যা এবং পেট অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠার মতো উপসর্গে ভুগছিলেন। কলকাতার মেডিক্যালে কর্মরত এক প্রাক্তন আত্মীয়ের উদ্যোগে তিনি গত মে মাসে ভর্তি হন মেডিক্যালে। স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন, তাঁর জরায়ুর ভিতরে অস্বাভাবিক বড় একটি টিউমার বেড়ে উঠেছে, যা প্রায় পুরো পেট জুড়ে দখল করে ফেলেছে। একাধিক টেস্টের পর সিদ্ধান্ত হয়, ঝুঁকি থাকলেও অস্ত্রোপচার ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। প্রায় দশ দিন আগে ডাঃ পার্থসারথী মিত্রর নেতৃত্বে মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিভাগের একটি বিশেষজ্ঞ দল সার্জারি করেন। চিকিৎসকরা জানান, এই অপারেশন তিনটি কারণে অত্যন্ত কঠিন ছিল। প্রথমত, রোগী অবিবাহিতা হওয়ায় জরায়ু অক্ষত রেখে টিউমার অপসারণ করা জরুরি ছিল। এছাড়া, জন্মগত প্লেটলেট রোগে আক্রান্ত হওয়ায় রক্তক্ষরণের ঝুঁকি ছিল প্রাণঘাতী পর্যায়ে। তাছাড়া, এত বড় আকারের জরায়ুর টিউমার চিকিৎসা বিজ্ঞানে খুবই বিরল। আর শুধু টিউমারটি আলাদা করে বের করতে প্রয়োজন ছিল অসাধারণ দক্ষতা।
সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই চিকিৎসক দল সফলভাবে টিউমারটি কেটে বের করেন। অপারেশনের পর এখন সমর্পিতা অনেকটাই সুস্থ। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ধীরে ধীরে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন। ডাঃ মিত্র বলেন, রোগীর প্লেটলেট কাউন্ট সাধারণত ৫০ থেকে ৬০ হাজারের মধ্যে থাকত। এমন পরিস্থিতিতে এত বড় টিউমার বের করা সত্যিই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তবে অভিজ্ঞ টিমওয়ার্ক এবং সঠিক পরিকল্পনার কারণে অপারেশন সফল হয়েছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এর আগে বাংলাদেশসহ একাধিক দেশের রোগীর জটিল চিকিৎসা সফল হয়েছে। এবার ত্রিপুরার এই তরুণীর জীবন রক্ষার ঘটনায় ফের প্রমাণিত হল, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ভিনরাজ্যের রোগীদের কাছেও মেডিক্যালের ওপর ভরসা ক্রমশ বাড়ছে।