কলকাতা পুলিশের ইতিহাসে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত। খুন, ডাকাতি, অ্যাসিড হামলা, তোলাবাজি, অপহরণ কিংবা সুপারি কিলিংয়ের মতো সংগঠিত এবং গুরুতর অপরাধের তদন্তে আর নির্দেশ দিতে পারবেন না শহরের গোয়েন্দা প্রধান তথা জয়েন্ট সিপি (ক্রাইম)। নতুন নির্দেশ অনুযায়ী, এবার থেকে এই সমস্ত গুরুতর মামলার তদন্তের দায়িত্ব নির্ধারণ করবেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার।
আরও পড়ুন:.থানার নিরাপত্তায় পদক্ষেপ, নজরদারি বাড়াতে আট থানায় বসছে হাই-টেক সিসিটিভি
১১ অগস্ট পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা একটি লিখিত নির্দেশিকা জারি করেন। তাতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, খুন, ডাকাতি, অপহরণ, তোলাবাজি, অ্যাসিড হামলা, সুপারি কিলিং-এর মতো গুরুতর অপরাধে তদন্তের নির্দেশ দেবেন শুধুমাত্র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার। সুপ্রিম কোর্ট বা হাই কোর্ট থেকে পাঠানো মামলা, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার উচ্চপদস্থ আধিকারিক বা গেজেটেড অফিসার জড়িত ঘটনাতেও নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা থাকছে কেবল কমিশনারের হাতে।
৩ কোটি টাকার নিচে আর্থিক প্রতারণা বা ব্যাঙ্ক জালিয়াতির মামলায় সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন জয়েন্ট সিপি ক্রাইম। কিন্তু ৩ কোটির বেশি অঙ্কের প্রতারণা বা জালিয়াতি হলে সেই বিষয়ে নির্দেশ দেবেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার। একইভাবে, সাইবার জালিয়াতির ক্ষেত্রেও ১ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত অভিযোগে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন গোয়েন্দা প্রধান। তার বেশি হলে দায়ভার যাবে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের ওপর। কলকাতা পুলিশের ১৫০ বছরের ইতিহাসে জয়েন্ট সিপি (ক্রাইম) পদটি সবসময়েই গুরুত্বের কেন্দ্রে ছিল। কমিশনারের পর শহর পুলিশের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী পদ হিসেবেই দেখা হত এই অবস্থানকে। এতদিন গুরুতর অপরাধের তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার একচ্ছত্র অধিকার ছিল গোয়েন্দা প্রধানের হাতে। নতুন নিয়মে সেই ক্ষমতা কার্যত কেটে নেওয়া হয়েছে।
ফলে পুলিশ মহলে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। এ কি তবে গোয়েন্দা প্রধানের ক্ষমতা খর্ব করার প্রক্রিয়া? আইপিএস মহলের একাংশের মতে, এই নির্দেশ ডিআইজি পদমর্যাদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এতে গোয়েন্দা শাখার ভেতরে একাধিক ক্ষমতার কেন্দ্র তৈরি হতে পারে এবং অফিসারদের মধ্যে বিভ্রান্তিও বাড়তে পারে। এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে লালবাজারের শীর্ষকর্তারা মুখ খুলতে চাননি। তবে কর্মীদের দাবি, দক্ষতা ও দায়বদ্ধতা বাড়াতেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।