মালদা জেলা আদালতের পকসো আদালতে রায় ঘোষণা হল তিন বছর আগে ঘটে যাওয়া এক নৃশংস ঘটনার। নাবালিকা প্রেমিকাকে ধর্ষণ ও খুনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে শামিম আক্তার নামে এক যুবক। সোমবার বিচারক রাজীব সাহা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক লক্ষ টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন অভিযুক্তকে। তবে অভিযুক্তের বাবাকে বেকসুর খালাস করে আদালত।
আরও পড়ুন: খাস কলকাতায় খুন! হরিদেবপুরে মাছের বাজার থেকে যুবকের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার
মামলার বয়ান অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২১ জুন থেকে নিখোঁজ ছিল পুরাতন মালদার একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। চার দিন পরে গ্রামের একটি পুকুর থেকে উদ্ধার হয় তাঁর অর্ধনগ্ন ও পচাগলা দেহ। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, ওই কিশোরীর সঙ্গে স্থানীয় যুবক শামিম আক্তারের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। অভিযোগ অনুযায়ী, ঘটনার রাতে শামিম ফোন করে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর জোরপূর্বক শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে শ্বাসরোধে খুন করে বলে অভিযোগ ওঠে। প্রমাণ লোপাটের জন্য ছাত্রীর দেহে ইট বেঁধে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ঘটনার সূত্র খুঁজতে গিয়ে পুলিশ স্থানীয় এক পরিত্যক্ত বাড়িতে রক্তের দাগ দেখতে পায়। এছাড়াও উদ্ধার হয়, কিশোরীর অন্তর্বাস ও কিছু প্রেমপত্র। সবকিছু মিলিয়ে সন্দেহ ঘনীভূত হয় শামিম ও তার পরিবারের উপর।
পুলিশি তদন্তে উঠে আসে, প্রেমের সম্পর্কে ভাঙন এবং সন্দেহ থেকেই খুনের পরিকল্পনা করে শামিম। তার ধারণা ছিল, কিশোরীর অন্য কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সেই রাগ থেকেই সে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটায়।ঘটনার পর ছাত্রীর বাবা-মা সরাসরি শামিম ও তার বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ দুজনকেই গ্রেফতার করে। মামলার বিচার প্রক্রিয়া চলে প্রায় দুই বছর। এই সময়ে ১৩ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন বিচারক। সমস্ত প্রমাণ ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে শেষমেশ আদালত শামিমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনায়। তবে প্রমাণের অভাবে তার বাবাকে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়।
সরকারি কৌঁসুলি অসিতবরণ বস জানিয়েছেন, এই মামলায় সমস্ত প্রমাণ আদালতে পেশ করা হয়েছিল। শেষমেশ অভিযুক্ত শামিম দোষী প্রমাণিত হয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, এক লক্ষ টাকা জরিমানা নাবালিকার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে। তবে নিহত ছাত্রীর পরিবার জানিয়েছে, তাঁরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নন। তাঁদের দাবি, শামিমের বাবাকেও শাস্তি দেওয়া উচিত ছিল। পরিবার এখনও বিশ্বাস করে, ঘটনাটির নেপথ্যে আরও অনেকের হাত রয়েছে।