জীবিকার সন্ধানে গিয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখে পড়লেন মুর্শিদাবাদের তিন পরিযায়ী শ্রমিক। অভিযোগ, শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার কারণে তাঁদের বাংলাদেশি নাগরিক বলে সন্দেহ করে অসম পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছে। এমনকি ভোটার কার্ড, আধার কার্ড-সহ প্রয়োজনীয় পরিচয়পত্র দেখানো সত্ত্বেও কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সরাসরি তাঁদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে দুই রাজ্যের শ্রমিক মহল ও রাজনৈতিক অঙ্গনে।
আরও পড়ুন: বিজেপির উপর ১৪৪ ধারা জারি করতে হবে, পরিযায়ী ইস্যুতে হুঁশিয়ারি উদয়নের
ধৃত তিন শ্রমিক হলেন মুর্শিদাবাদের শক্তিপুর থানার সোমপাড়ার নূতনপাড়ার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম, একই এলাকার সানাউর মল্লিক এবং বেলডাঙার জাহির শেখ। জানা গিয়েছে, গত ২২ অগস্ট জীবিকার খোঁজে তাঁরা অসমের নগাঁও জেলার হাইবোরগাও অঞ্চলে পৌঁছন। সেখানে ফেরি করে সংসার চালাতেন। অভিযোগ, স্থানীয় কিছু মানুষ তাঁদের বাংলায় কথা বলতে শুনে পুলিশে খবর দেন। এর পরেই পুলিশ ওই তিনজনকে আটক করে। অভিযোগ আরও গুরুতর। শ্রমিকদের সহকর্মীদের দাবি, থানায় নিয়ে গিয়ে অসম পুলিশ দেড় লক্ষ টাকা চেয়েছিল মুক্তিপণের বিনিময়ে। টাকা না দেওয়াতেই তাঁদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়।
খবর পাওয়া মাত্রই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ নড়েচড়ে বসে। পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সামিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তিনি বিষয়টি রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের জানিয়েছেন। মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ অসম পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে মুক্তির চেষ্টা চালাচ্ছে। তাঁর কথায়, ওই শ্রমিকরা একেবারেই বাংলার মানুষ। তাঁদের পরিচয়পত্র সব কিছুই রয়েছে। তাঁদের মুক্ত করতে আইনি পদক্ষেপ থেকে শুরু করে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, ধৃত শ্রমিকদের পরিবারে নেমে এসেছে উদ্বেগ। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, যাঁরা সংসারের একমাত্র রোজগারকারী, তাঁদের এইভাবে আটক করায় ঘর চালানোই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত তাঁদের নিরাপদে ফেরানোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এই ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক মহলেও উত্তেজনা ছড়িয়েছে। তৃণমূলের দাবি, বিজেপি-শাসিত অসমে বাংলাভাষীদের পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করা হচ্ছে। আসন্ন বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে এই ইস্যুতে প্রস্তাব আনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তৃণমূল বিধায়কেরা।