তরুণী নৃত্যশিল্পীকে কি তাঁর গাড়ি থেকে বের করে তুলে নিয়ে যাওয়ার ছক কষেছিল মত্ত যুবকের দল? এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পানাগড়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার বলি নৃত্যশিল্পী সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের গাড়ির চালক এবং তাঁর সহকর্মীরা।
এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় যতটুকু জানা গিয়েছে, মৃত তরুণীর বাড়ি চন্দননগরের নাড়ুয়া রায়পাড়া এলাকায়। তিনি একজন নৃত্যশিল্পী ছিলেন এবং তাঁর একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাও ছিল তাঁর। বিভিন্ন জায়গায় নাচের অনুষ্ঠান করতেন সুতন্দ্রা ও তাঁর সহকর্মীরা। আগেও কর্মসূত্রে ভিনরাজ্যে যেতে হয়েছিল তাঁকে। রবিবারও তেমনই একটি কাজে গয়া যাচ্ছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন গাড়ির চালক ও তাঁর সংস্থার অন্য কর্মীরা।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের প্রশ্নের জবাবে তাঁরা জানিয়েছেন, বুদবুদ থানা এলাকায় একটি পেট্রল পাম্পে তেল ভরার জন্য তাঁরা গাড়ি দাঁড় করিয়েছিলেন। সেখান থেকে বের হওয়ার পরই দেখা যায়, একটি গাড়ি তাঁদের পিছু নিয়েছে। সেই গাড়িটি কিছুক্ষণ পরই সুতন্দ্রাদের গাড়িতে পিছন থেকে ধাক্কা মারে। এবং তারপর পাশ কাটিয়ে কিছুটা এগিয়ে যায়।
সুতন্দ্রার সহকর্মীর দাবি, এই সময় অন্য গাড়িতে থাকা যুবকরা সুতন্দ্রাকে উদ্দেশ করে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও কটূক্তি করছিল। তাদের দেখে সুতন্দ্রার গাড়ির চালক ও তাঁর সহকর্মীদের মনে হয়েছিল, ওই যুবকরা সকলেই মদ্যপ!
মন্টু নামে সুতন্দ্রার এক সহকর্মীকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে, সেই সময় 'গাড়িতে ম্যাডাম রয়েছেন। আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। গাড়ি থামালে ওরা ম্যাডামকে নামিয়ে তুলে নিয়ে চলে যেতে পারত!'
মন্টু জানিয়েছেন, এরপরও একাধিকবার ওই যুবকরা সুতন্দ্রাদের গাড়িতে ধাক্কা মারে। তাদের হাতে থেকে বাঁচতেই অন্য একটি রাস্তায় গাড়ি ঢুকিয়ে দেন সুতন্দ্রার গাড়ির চালক। কিন্তু, সেই রাস্তাতেও তাঁদের পিছু করা হয় এবং ধাক্কা মারা হয় বলে অভিযোগ। এই ধাক্কাধাক্কির ফলে জাতীয় সড়কে ওঠার আগেই সুতন্দ্রাদের গাড়ি উলটে যায় এবং ঘটনাস্থলেই বছর সাতাশের ওই তরুণী শিল্পীর মৃত্যু হয়।
গোটা ঘটনায় এখনও বিহ্বল হয়ে রয়েছেন সেই সময় সুতন্দ্রার সঙ্গে লোকজন। এমন যে কখনও ঘটতে পারে, তা তাঁরা কোনও দিন কল্পনাও করতে পারেননি। এদিকে, ইতিমধ্যেই সুতন্দ্রাদের গাড়ি এবং অভিযুক্তদের গাড়ি - দু'টিই আটক করেছে পুলিশ। তবে, শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী - অভিযুক্তদের কাউকেই এখনও পর্যন্ত শনাক্ত বা পাকড়াও করা সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্ট এলাকার একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সুতন্দ্রার মৃতদেহ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার অভিষেক গুপ্ত সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, 'আমরা গাড়িটি উদ্ধার করেছি। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।'