নদিয়ার তেহট্টে ন’বছরের শিশুকে খুনের অভিযোগে প্রতিবেশীদের গণপিটুনি ও অগ্নি সংযোগের ঘটনায় উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ দাবি করছে, পুরো ঘটনাটাই ছিল সুপরিকল্পিত। এর নেপথ্যে কিছু মানুষের প্ররোচনাও কাজ করেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে করছে পুলিশ। গত শনিবার শিশুর রহস্যজনক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছিল নিশ্চিন্তপুর গ্রাম। সেই ঘটনাতেই প্রতিবেশী পরিবারকে টেনে নিয়ে গিয়ে গণপিটুনি, অগ্নিসংযোগ সবই পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে বলে অনুমান পুলিশের।
আরও পড়ুন: বৃষ্টির জমা জল ঢুকে পড়েছিল ঘরে, বিছানা থেকে পড়ে মৃত্যু ৫ মাসের শিশুর
জানা যাচ্ছে, শনিবার সকালে গ্রামের ডোবা থেকে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র স্বর্ণাভ বিশ্বাসের দেহ উদ্ধার হতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরিবারের অভিযোগ ছিল, শিশুটিকে খুন করে দেহ ফেলে দিয়েছে প্রতিবেশী উৎপল মণ্ডল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এরপরই উন্মত্ত জনতা উৎপলের বাড়ির সামনে ভিড় জমায়। চারটি প্রবেশপথবিশিষ্ট নিশ্চিন্তপুর গ্রামে রাস্তাগুলি আটকে রাখা হয়, তারপর পরিকল্পনা করে অভিযুক্তদের বাড়ি থেকে টেনে এনে মন্দিরের কাছে গণপিটুনি দেওয়া হয়।
এই ঘটনায় আক্রান্তদের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়, পাটের গুদাম ও আত্মীয়ের বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। খবর পেয়ে গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করে বিশাল পুলিশ বাহিনী। কিন্তু রাস্তাগুলি অবরুদ্ধ থাকায় তারা ঢুকতে পারেনি। পরে দমকলও ঘটনাস্থলের দিকে ছুটে গেলেও বিক্ষোভকারীদের বাধায় অনেকক্ষণ আটকে থাকে। অবশেষে পুলিশ কোনোমতে উৎপল মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী সোমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়, কিন্তু ততক্ষণে দু’জনেরই মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত উৎপলের পুত্রবধূ নিশা মণ্ডল এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শিশুখুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই ছোট্টু মণ্ডল, কার্তিক মণ্ডল, সুচিত্রা মণ্ডল এবং সুপ্রিয়া ভৌমিক নামে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর গণপিটুনির অভিযোগে ধরা পড়েছে সৌম্যজিৎ বিশ্বাস নামে এক যুবকও। সোমবার আদালতে পেশ করে তাঁর হেফাজতের আবেদন জানাবে পুলিশ।
তেহট্ট মহকুমা পুলিশের আধিকারিক শুভতোষ সরকার জানিয়েছেন, গ্রামে প্রবেশ করতে পুলিশকে ইচ্ছে করে আটকানো হয়েছিল। দমকলও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। গণপিটুনির ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিশুমৃত্যুর পাশাপাশি সামগ্রিক ঘটনাটির তদন্ত চলছে। শিশুপাচার চক্রের যোগ রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি, উৎপল মণ্ডলের পরিবার আগেও শিশু পাচারের মতো ঘটনায় নাম জড়িয়েছে। তবে সেই অভিযোগ কতটা সত্য, তা এখনও যাচাই করছে তদন্তকারীরা।