চিনের তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই ভারতের বেশি বিশ্বস্ত বন্ধু। প্রকারান্তরে এমনই বার্তা দিলেন ভারতে রাষ্ট্রদূত হিসাবে মার্কিন মনোনীত প্রার্থী সার্জিও গোর। এরপরেই কূটনীতি মহলে প্রশ্ন উঠছে, তবে কী দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলছে? ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে জট কাটার তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন সার্জিও গোর।
সার্জিও গোর বর্তমানে হোয়াইট হাউসের ‘প্রেসিডেন্সিয়াল পার্সোনেল অফিস’ বা প্রেসিডেন্টের কর্মীবর্গ দফতরের প্রধান। গত আগস্টে ভারতে মার্কিন পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসাবে গোরকে মনোনীত করেন ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার সার্জিও গোর বলেন, 'শুল্ক নিয়ে সম্পর্কে সামান্য ওঠাপড়া থাকলেও ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব অনেক বেশি শক্তিশালী এবং এই বন্ধুত্ব অনেক দশক ধরে তৈরি করা হয়েছে। যদিও আমাদের (ভারত-মার্কিন) সম্পর্ক কোনও সমস্যার সম্মুখীন হয়, আমরা সেই সমস্যার সমাধানের পথে এগোচ্ছি। ভারত সরকার এবং ভারতীয় জনগণের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও অনেক দশকের। এবং এটি ভারত-চিন সম্পর্কের থেকে অনেক বেশি উষ্ণ। চিনা সম্প্রসারণবাদ কেবল ভারতের সীমান্তে নয়, সমগ্র অঞ্চল জুড়ে রয়েছে।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেব যে ভারতকে আমাদের পক্ষে নিয়ে আসতে এবং তাদের চিন থেকে দূরে রাখতে।'
অন্যদিকে, ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অপ্রচলিত ও অভিনব’ অস্ত্র ব্যবহার করেছিল চিন। এমনই বিস্ফোরক দাবি করেছেন মার্কিন সেনেটর বিল হ্যাগার্টি। তিনি বলেন, 'ভারত ও চিনের মধ্যে অভিযোগ এবং অবিশ্বাসের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মাত্র পাঁচ বছর আগে, ভারত ও চিন একটি বিতর্কিত সীমান্ত নিয়ে লড়াই করছিল। এবং চীন একটি তড়িৎ চৌম্বকীয় অস্ত্র ব্যবহার করে ভারতীয় সেনাদের আক্ষরিক অর্থেই গলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।' চলতি মাসের গোড়াতেই চিনের তিয়ানজিন শহরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকের পরেই এই বিস্ফোরক অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিশানায় ছিল ভারত-রাশিয়া-চিন 'সখ্য'। ট্রুথ সোশালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লেখেন, 'মনে হচ্ছে আমরা ভারত ও রাশিয়াকে গভীর ও অন্ধকার চিনের কাছে হারিয়েছি। ওদের দীর্ঘমেয়াদি উন্নতি কামনা করি।'
গালওয়ান উপত্যকায় কী হয়েছিল?
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে অশান্তি বাড়তে বাড়তে ২০২০ সালের জুন মাসে গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় সেনার সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে চিনা বাহিনীর। গোলাগুলি না চললেও, সংঘর্ষ চলাকালীন চিনা সেনা বিশেষভাবে তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করে বলে জানা যায়। ওই সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। পরে তাদের পাঁচ জওয়ানের মৃত্যুর কথা স্বীকার করে চিনও। গালওয়ান সংঘর্ষের জেরেই ভারত-চিনের বোঝাপড়া তলানিতে এসে ঠেকে। এরপরও লাদাখ থেকে অরুণাচল প্রদেশ, লাগাতার চিনা আগ্রাসনের খবর সামনে এসেছে সাম্প্রতিককালে।