নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে কে থাকবেন-এই প্রশ্নে ‘জেন জি’ আন্দোলনকারীদের অন্দরেই বড় পালাবদল দেখা যাচ্ছে। বুধবার রাত পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির নাম প্রায় নিশ্চিত বলে শোনা যাচ্ছিল, কিন্তু বৃহস্পতিবার হঠাৎ সামনে আসে আরেকটি নাম। বিদ্যুৎ সংকট মেটানোয় নেপালে ‘হিরো’ হিসেবে পরিচিত কুলমান ঘিসিং এখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন।
কুলমান ঘিসিং নেপালের ইলেকট্রিসিটি অথরিটির প্রাক্তন প্রধান। ৫৪ বছর বয়সি এই ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার গত কয়েক বছরে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার এনেছিলেন। নেপালের ‘জেন জি’ আন্দোলনকারীরা তাঁকে একজন দেশভক্ত এবং সবার প্রিয় বলে দাবি করছেন। তাঁদের মতে, সুশীলা কার্কির তুলনায় ঘিসিং আরও তরুণ ও কার্যকর নেতৃত্ব দিতে পারবেন।এছাড়াও অন্তবর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে উঠে এসেছে কাঠমান্ডুর ১৫তম মেয়র বালেন্দ্র শাহ বা বলেন-র নাম।তবে সবথেকে বেশি শোনা যাচ্ছে, প্রাক্তন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ঘিসিং নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের হাল ধরুন, এমনটাই চাইছেন গণবিক্ষোভে নেপালের কেপি শর্মা ওলি সরকারকে গদিচ্যুত করা আন্দোলনকারীরা।এর আগে হাজার হাজার তরুণ সমর্থক সুশীলা কার্কিকেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের আসনে দেখতে চাইছিলেন। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিদের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা রয়েছে। অন্যদিকে, আরেক জনপ্রিয় মুখ বলেন্দ্র শাহ আগেই আগ্রহী নন বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
নেপালের সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচনে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে তাদের নেতাই প্রধানমন্ত্রী হবেন। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই নিয়ম কার্যকর করা কঠিন। তাই প্রেসিডেন্টের হাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মনোনয়নের ক্ষমতা রয়েছে। এই প্রেক্ষিতে কুলমান ঘিসিংয়ের নাম আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে।প্রতিবাদী গোষ্ঠীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'যেহেতু বলেন্দ্র শাহ আগ্রহ দেখাননি, ধর্মান মেয়র হার্ক সাম্পাং সবার সমর্থন টানতে পারছেন না, আর সুশীলা কার্কি অযোগ্য ও সত্তরোর্ধ্ব- তাই দেশপ্রেমিক এবং সর্বজনপ্রিয় প্রকৌশলী কুলমান ঘিসিংকেই অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
কুলমান ঘিসিং কে?
কুলমান ঘিসিং নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির (এনইএ) প্রাক্তন প্রধান। তাঁর নেতৃত্বে দেশজুড়ে দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ভয়াবহ সমস্যা দূর হয়েছিল। ঘিসিং সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে বিদ্যুৎ বিতরণ ও ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন আনেন। এর ফলে নেপালের কোটি কোটি মানুষ অন্ধকার থেকে মুক্তি পায়। সেই সময় থেকে সাধারণ মানুষ তাঁকে 'বিদ্যুতের নায়ক' বলে ডাকতে শুরু করে।কুলমান ঘিসিংর ভারত যোগ রয়েছে। ভারতের জামশেদপুরে আঞ্চলিক প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটে তিনি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা করেন। পরে কাঠমান্ডুর পুলচৌক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকেও উচ্চতর ডিগ্রি নেন। শুধু প্রযুক্তি নয়, প্রশাসনিক দক্ষতা অর্জনের জন্য তিনি এমবিএও করেন। তাঁর পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি, কাজের প্রতি নিষ্ঠা আর রাজনীতির বাইরে থেকে সৎভাবে কাজ করার ক্ষমতা তাঁকে বিশেষ করে তুলেছে।
কুলমান ঘিসিং ১৯৯৪ সালে নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ (এনইএ)-তে তাঁর পেশাগত কর্মজীবন শুরু করেন, ধীরে ধীরে পদমর্যাদার উন্নতি হয়। ২০১৬ সালে, ঘিসিংকে এনইএ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিযুক্ত করা হয়। ওই পদে থাকাকালীন তিনি, দেশের ১৮ ঘন্টা দৈনিক বিদ্যুৎ বিভ্রাট দূর করে নেপালের ঘরে ঘরে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। ২০২০-সালে তাঁর জায়গায় অন্য একজনকে আনা হলেও, ২০২১ সালে পুরনো পদে ফেরানো হয় ঘিসিংকে।তথ্য বলছে, কেপি শর্মা ওলি সরকারের সঙ্গে মতবিরোধ হয়েছিল তাঁর। তাঁর মেয়াদ শেষের মাত্র কয়েক মাস আগে কেপি শর্মা ওলি সরকার ২৪ মার্চ, ২০২৫ তারিখে কুলমান ঘিসিংকে এনইএ-এর নির্বাহী পরিচালক পদ থেকে অপসারণ করে। তাঁর জায়গায় ওই পদে বসেন, হিতেন্দ্র দেব শাক্য।বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ঘিসিং-এর অপসারণের তীব্র সমালোচনা করেছিল সেই সময়।