নীল আকাশ, সবুজ ঘেরা কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য তখন উপভোগ করছিলেন পর্যটকরা। আচমকাই গুলির শব্দ। প্রাণ ভয়ে চিৎকার, ছুটে পালাতে শুরু করলেন অনেকে। অনেকে বুঝ উঠতে পারছিলেন না, কী ঘটছে। কাশ্মীরের প্রকৃতির রূপসী ক্যানভাসের মধ্যে ছিটকে এল রক্তের দাগ! নিমেষে জঙ্গিদের গুলিতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে শুরু করলেন অনেকে। বহুজন আহত। এমনই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ের বইসরনে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন সেই দুপুরে জঙ্গি তাণ্ডবের নৃশংসতার কথা।
পুনের ব্যবসায়ী ৫৪ বছর বয়সী সন্তোষ জগদলে তাঁর পরিবারকে নিয়ে মঙ্গলবার পহেলগাঁওতে ছুটির মেজাজে আনন্দ উপভোগ করছিলেন। ঠিক তখনই কী ঘটল? চোখের সামনে বাবাকে জঙ্গিদের গুলি করে খুন করার দৃশ্য ভুলতে পারছেন না সন্তোষের ২৬ বছর বয়সী মেয়ে আশাবরী। তিনি বলছেন, তাঁর বাবাকে কিছু একটা পড়তে দিয়েছিল জঙ্গিরা। তিনি তা পড়তে না পারায় তিনটি গুলি করা হয়, গুলি লাগে মাথায়, কানের পিছনে, পিঠে। বইসরনের ‘মিনি সুইৎজারল্যান্ড’ নামের জায়গায় সেদিন আরও অনেকের মতোই গিয়েছিল জগদলে পরিবার। বাবা, কাকার সঙ্গে আনন্দে মেতে ছিল আশাবরীও। তারপর চোখের সামনে বাবা, কাকার খুন। কী ঘটেছিল? আশাবরী বলছেন,' আমরা পাঁচ জনের একটি দল ছিলাম, আমার বাবা-মা সহ। আমরা পাহেলগাঁওয়ের কাছে বইসরান উপত্যকায় ছিলাম এবং যখন গুলি শুরু হয়েছিল তখন মিনি সুইজারল্যান্ড নামক একটি স্থানে ছিলাম।' তিনি বলছেন,'আমরা তৎক্ষণাৎ কাছের একটি তাঁবুতে সুরক্ষার জন্য ছুটে গেলাম। আরও ছয় থেকে সাতজন (পর্যটক)ও সেখানে উপস্থিত হলেন। গুলিবর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে আমরা সবাই মাটিতে শুয়ে পড়লাম, যা তখন আমরা ধরে নিলাম সন্ত্রাসী এবং নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্যে গুলিবর্ষণ হয়েছে।' এরপর? আশাবরী বলছেন,' তারপর তারা আমাদের তাঁবুতে এসে আমার বাবাকে বাইরে আসতে বলল।' তাঁর বাবার হত্যার পর তাঁর কাকার দিকে এগোয় জঙ্গিরা। আশাবরী বলছেন,'আমার কাকা আমার পাশেই ছিলেন। সন্ত্রাসীরা তখন তাঁকে লক্ষ্য করে চার থেকে পাঁচটি গুলি চালায়। তারা ঘটনাস্থলে থাকা আরও কয়েকজনকে গুলি করে। সাহায্য করার জন্য কেউ ছিল না।' তিনি বলছেন,জঙ্গিরা মোদীকে তিরস্কারও করেছিল। জঙ্গিরা মানতে চায়নি যে তারা নিরীহদের হত্যা করে, সেই সূত্রেই এই বক্তব্য আসে।
উত্তর প্রদেশের কানপুরের শুভম দিবেদী এই জঙ্গি হানায় মৃত্যুর কোলে মঙ্গলবার ঢোলে পড়েন। সদ্য বিয়ে হয়েছিব শুভমের। ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে হয়েছিল তাঁদের। শুভমের আত্মীয় সৌরভ বলছেন,' বৌদি আমার কাকাকে ফোন করেছিলেন, জানিয়েছেন শুভম মারা গিয়েছেন। বলেছেন, গুলি চালনার আগে নাম জানতে চাওয়া হয়েছিল। আমরা খবর পেয়েছি ২-৩দিনের মধ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেহ ফেরানো হবে।'