ধূমকেতুর আদলে বহুদূর বিস্তৃত আলোর বিচ্ছুরণ। দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। আর গোলার অভিমুখেই ধেয়ে চলেছে অসংখ্য আলোর সরলরেখা। শনিবার গভীর রাতে দিল্লি এবং এনসিআর-র আকাশে এমনই দৃশ্য চোখে পড়ল বাসিন্দাদের। এক পলকের দেখায় মহাজাগতিক বস্তু বলেই ঠাহর হয়। কিন্তু সেটি চানা মহাকাশযান হতে পারে বলেও জল্পনা শুরু হয়েছে। তাই রাতের আকাশে আবির্ভূত ওই দৃশ্য নিয়ে দ্বিখণ্ডিত নেট দুনিয়া।
শনিবার রাত ১ টা ২০ নাগাদ দিল্লি এবং এনসিআর সংলগ্ন গাজিয়াবাদ এবং আলিগড়ের মতো শহরগুলির আকাশে ওই দৃশ্য চোখে পড়েছে। দিল্লি ছাড়াও হরিয়ানার গুরুগ্রাম, উত্তরপ্রদেশের নয়ডা এবং রাজস্থানের জয়পুরের বাসিন্দারাও সেই মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছেন।অনেকেই এই স্বর্গীয় দৃশ্যটি তাঁদের মোবাইল ফোন এবং ক্যামেরায় তুলেছেন। বর্তমানে সেই ভিডিওগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, রাতের আকাশে উজ্জ্বল আগুনরেখা ছুটে যাচ্ছে এবং কিছুক্ষণ পর সেটি ছোট ছোট জ্বলন্ত খণ্ডে ভেঙে পড়ছে। বহু নেটিজেন বলেছেন, যেন তারা খসে পড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিওগুলিতে দেখা এই উজ্জ্বল বস্তুর অস্তিত্ব সম্পর্কে কিছু বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন দাবিও করেছেন। ইলন মাস্কের সংস্থা এক্স-এর এআই চ্যাটবট ‘গ্রোক’ আবার বলেছে, এটি সম্ভবত চিনা সিজি-৩বি রকেটের বডির ধ্বংসাবশেষ যা বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশ করছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই ঘটনাটি আসলে একটি বোলাইড। এমন একধরনের উল্কাপিণ্ড, যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সময় প্রবল তাপ ও ঘর্ষণে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। সাধারণ উল্কাপাত প্রায়ই দেখা যায়, কিন্তু এত উজ্জ্বল ও বিস্তীর্ণ এলাকায় দৃশ্যমান উল্কাপাত অত্যন্ত বিরল। তবে এর ফলে কোনও ক্ষতির আশঙ্কা নেই। কারণ বেশিরভাগ উল্কাই পৃথিবীতে পৌঁছানোর আগেই সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়। তাই মাটিতে পড়ে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানোর সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। আমেরিকান মিটিওর সোসাইটি জানিয়েছিল, সেপ্টেম্বর মাস ছোট ছোট উল্কাবৃষ্টির জন্য সঠিক সময়। তবে নির্দিষ্ট ঘরানার বাইরেও এমন বিচ্ছিন্ন অগ্নিগোলক দেখা দিতে পারে। দিল্লির আকাশে শুক্রবার রাতের দৃশ্যটি প্রমাণ করে, তুলনামূলক বড় একটি মহাজাগতিক শিলা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে শেষ হয়ে গেছে।