চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চালাতে হলে শুধু অভিযোগ করলেই হবে না, আদালতে স্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে হবে যে চিকিৎসায় ‘গুরুতর অবহেলা’ ঘটেছে। বুধবার এমনই পর্যবেক্ষণ করলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অজয়কুমার মুখোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, কোনও চিকিৎসকের সিদ্ধান্তে সামান্য ভুল বা চিকিৎসায় ত্রুটি সবসময় অপরাধ হিসেবে ধরা যাবে না। এমন অভিযোগ টিকতে হলে প্রমাণ করতে হবে তিনি এমন অবহেলা করেছেন যা অন্য কোনও সৎ ও বিচক্ষণ চিকিৎসক কখনও করতেন না।
আরও পড়ুন: দলত্যাগ বিরোধী আইন নিয়ে হাইকোর্টে লিখিত বক্তব্য জমা দিলেন শুভেন্দু
মামলার বয়ান অনুযায়ী, ২০১৪ সালের জুলাই মাসে সিঁড়ি থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন ব্যারাকপুরের বাসিন্দা রঞ্জিত সরকারের সন্তান। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসকের গাফিলতিতে পর্যাপ্ত পরীক্ষা হয়নি। মেরুদণ্ডের আঘাত দেখা হলেও পেটে আঘাত বা রক্তচাপ-স্পন্দন রেকর্ড করা হয়নি। একাধিকবার পেট ব্যথা ও অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিলেও সেদিকে নজর দেওয়া হয়নি। পরদিন রক্ত পাতলা করার ইনজেকশন দেওয়ার পর রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়। দু’দিন পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়।
রঞ্জিত সরকারের দাবি, ভুল ইনজেকশন এবং অবহেলাই তাঁর ছেলের মৃত্যুর কারণ। ২০১৭ সালে তিনি ব্যারাকপুর আদালতে চিকিৎসক রবি গণেশ ভরদ্বাজের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন। আদালত তখন অভিযুক্ত চিকিৎসকের নামে সমন জারি করে। ২০১৮ সালে অভিযুক্ত চিকিৎসক সমনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁর আইনজীবীর যুক্তি ছিল, চিকিৎসায় ভুল হলেই তাকে ‘অপরাধ’ বলা যায় না। এমন অভিযোগের ক্ষেত্রে স্বাধীন মেডিক্যাল বোর্ডের মতামত নেওয়া জরুরি, যা হয়নি। সেই সঙ্গে তিনি জানান, স্থানীয় আদালত অভিযুক্তের বিচারাধীন এলাকার বাইরে হওয়ায় সিআরপিসি অনুযায়ী অতিরিক্ত যাচাই করা উচিত ছিল।
অন্যদিকে, মৃত ছেলের বাবা নিজেই আদালতে সওয়াল করেন। তিনি ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ অজয় গুপ্তের রিপোর্ট পেশ করেন, যেখানে বলা হয় অযথা একাধিক রক্ত পাতলা করার ইনজেকশন দেওয়ার ফলে তিন লিটার রক্তক্ষরণ হয় এবং ‘হেমোরেজিক শক’-এ মৃত্যু হয়। তাঁর দাবি, এটি স্পষ্টতই ‘ক্রিমিনাল মেডিক্যাল নেগলিজেন্স’। সব শুনে বিচারপতি মুখোপাধ্যায় বলেন, একটি স্বাধীন মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা আবশ্যক। হাই কোর্ট অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে জারি হওয়া সমন খারিজ করে দেয়। তবে নির্দেশ দেয়, অন্তত তিন জন সরকারি চিকিৎসককে নিয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি হবে। অভিযোগকারীকে সব নথি সেই বোর্ডে জমা দিতে হবে। বোর্ডের মতামতের ভিত্তিতেই ব্যারাকপুর আদালত নতুন করে বিচার শুরু করবে।