আবারও অস্বাভাবিক মৃত্যু আইআইটি খড়্গপুরে। শনিবার দুপুর ২টো নাগাদ ক্যাম্পাসের বিআর আম্বেদকর হলের ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় ভিনরাজ্যের এক ছাত্রের দেহ উদ্ধারে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেহ উদ্ধার করে খড়্গপুর টাউন থানার অধীনস্থ হিজলি ফাঁড়ির পুলিশ। আর এই ঘটনার জেরে ফের একবার কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠল। এই নিয়ে চলতি বছরে আইআইটি খড়্গপুরে ৬ পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু হল।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত ছাত্রের নাম হর্ষকুমার পাণ্ডে। বাড়ি ঝাড়খণ্ডে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ফ্লুইড ডাইনামিকস নিয়ে গবেষণা করছিলেন হর্ষ। জেলার এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, কীভাবে ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে তা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরেই কারণ পরিষ্কার হবে। শনিবার আইআইটি, খড়গপুরে ছুটিই থাকে। ফলে হস্টেলের আবাসিকরা সাধারণত ঘরেই থাকেন। জানা গেছে, এদিন দুপুর দেড়টার সময় বি ব্লকের আবাসিকদের নজরে পড়ে, ৫৫৭ নং ঘরটির দরজা বন্ধ। এই ঘরে একাই থাকেন গবেষক-পড়ুয়া হর্ষ কুমার পাণ্ডে। তখন অন্যান্য আবাসিকরা দরজা ধাক্কা দিয়ে ডাকাডাকি করেন। সাড়া না পেয়ে হস্টেলের নিরাপত্তারক্ষীকে ডাকা হয়। তিনিও কোনও সাড়া পাননি। এরপরেই সন্দেহ বাড়ে। তড়িঘড়ি ওই নিরাপত্তারক্ষী খবর দেন হিজলি ফাঁড়িতে। সেখান থেকে পুলিশ আইআইটি ক্যাম্পাসে গিয়ে হস্টেলের ঘর থেকে উদ্ধার করে হর্ষের দেহ। পুলিশ সূত্রে খবর, তোয়ালে দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো ছিল তাঁর, তবে পা মাটিতে স্পর্শ করা ছিল। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
চলতি বছরে এ নিয়ে আইআইটি খড়্গপুরে ছ’জন পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু হল। এরমধ্যে পাঁচ জনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। গত জানুয়ারিতে মৃত্যু হয়েছিল শোয়ান মালিকের। মার্চে প্রাণ হারান মহম্মদ আসিফ কামার। এপ্রিল মাসে অনিকেত ওয়ালকর, গত ১৮ জুলাই মাসে কলকাতার রিজেন্ট পার্কের বাসিন্দা ঋতম মণ্ডলের মৃত্যু হয়। তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল। এই ঘটনার মাত্র তিন দিনের মাথায়, ২১ জুলাই রাতে গলায় ওষুধ আটকে প্রাণ হারান চন্দ্রদীপ পওয়ার নামের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি ছিলেন মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা। আইআইটি খড়্গপুরের ক্যাম্পাসে ক্রমাগত মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে পড়ুয়া মহল ও অভিভাবকদের মধ্যে। প্রশ্ন উঠছে, চলতি বছরে কী আইআইটি খড়্গপুরের এই ৫ পড়ুয়া আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন? সেক্ষেত্রে প্রশ্ন, কেন তাঁরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন? কোনও মানসিক চাপ? নাকি প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হওয়ার ভয়? একের পর এক পড়ুয়ার মৃত্যুতে উত্তর খুঁজছে আইআইটি খড়্গপুরও।