বিশ্বে আমাদের কোনও বড় শত্রু নেই। আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হল অন্য দেশগুলির উপর পরনির্ভরতা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নয়া ভিসা নীতির পাল্টা আত্মনির্ভরতার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নয়া ভিসা নীতিতে ঘোষণা করেছেন যে, এইচ-১ বি ভিসার জন্য ১ লক্ষ ডলার মাশুল গুনতে হবে। এইচ-১বি ভিসা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহু ভারতীয় বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করেন। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ভারতীয় কর্মীদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে কাজে প্রভাব পড়তে পারে। এই আবহে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
শনিবার গুজরাটের ভাবনগর থেকে সারা দেশের বন্দর উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন প্রকল্পের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।প্রায় ৩৪,২০০ টাকা কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। এরপরেই সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ভারত আজ ‘বিশ্ববন্ধু’র আদর্শে এগিয়ে চলেছে। বিশ্বে আমাদের কোনও বড় শত্রু নেই। কিন্তু আমাদের প্রকৃত শত্রু হল অন্য দেশগুলির উপর পরনির্ভরতা। এটাই আমাদের সবথেকে বড় শত্রু। আর আমরা সকলে মিলে চেষ্টা করলে ভারতের এই শত্রুকে নিজেরাই বিনাশ করতে পারব। পরনির্ভরতা শত্রুকে পরাজিত করতেই হবে।' তিনি আরও বলেন, 'যত বেশি আমরা বিদেশের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকব, ততই আমাদের ব্যর্থতা ধরা দেবে। বিশ্বে শান্তি, স্থায়িত্ব ও সমৃদ্ধি বজায় রাখতে বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ ভারতকে আত্মনির্ভর হতেই হবে।'
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, '১৪০ কোটি ভারতবাসীর ভবিষ্যৎ আমরা অন্য দেশের হাতের ছেড়ে দিতে পারি না। ভারতের উন্নয়নকে আমরা অন্যের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে পারি না। ফলে কয়েকশো দুঃখের একটাই দাওয়াই, তা হল ভারতকে ভারতকে আত্মনির্ভর করে তোলা।' পাশাপাশি সমুদ্র-নির্ভর বাণিজ্যে ভারতের অতীত গৌরবহানির জন্য কংগ্রেসের আর্থিক নীতিকে দুষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতে জাহাজ নির্মাণ শিল্প দুর্বল হওয়ার কারণে এত দিন ধরে বছরে ছ’লক্ষ কোটি টাকা বিভিন্ন দেশের জাহাজ এবং নৌ সংস্থাকে পণ্য পরিবহণের ভাড়া হিসাবে দিতে হয়েছে। যা ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেটের সমান।’ ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে বন্দর এবং সমুদ্র বাণিজ্যে পৃথিবীর অগ্রণী শক্তিতে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি।
কী বলছেন অমিতাভ কান্ত?
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তকে সুযোগ হিসেবেই দেখছেন নীতি আয়োগের প্রাক্তন সিইও অমিতাভ কান্ত। তাঁর মতে, এই সিদ্ধান্তের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা-গবেষণায় খরা আসতে চলেছে। একই সঙ্গে গতি আসবে ভারতীয় উদ্ভাবনে। ট্রাম্পের ঘোষণার পরেই এক্স হ্যান্ডলে নীতি আয়োগের প্রাক্তন সিইও লেখেন, ‘আন্তর্জাতিক প্রতিভার জন্য দরজা বন্ধ করে দিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গবেষণা, উদ্ভাবন, স্টার্টআপ, পেটেন্টের ঢেউ এবার বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, পুণে ও গুরুগ্রামের দিকে আসতে চলেছে।’ তিনি আরও জানান, ‘দেশের সেরা চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা ‘বিকশিত ভারতের’ দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই ক্ষতি হবে আর প্রাপ্তি ভারতের।’